নীলফামারীর ডোমার পৌর এলাকার রেলস্টেশনের পাশে মুচি সম্প্রদায়ের বসবাস। তারা প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে সেখানে ছেঁড়া জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন বলে এই স্থানটি ‘মুচির মোড়’ নামেই বেশি পরিচিত।
রাস্তার পাশে ছোট ছোট কাঠের জলচকিতে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন তারা। সঙ্গে থাকে সুই সুতা,চিমটি, নেহাই, কাঠের তক্তা, চামড়া,সুতা-চামড়া কাটার যন্ত্র আর রং কালি। ওই সব দিয়ে ছেঁড়া জুতা সেলাই আর রং বা কালি দিয়ে সুন্দরভাবে পরিপাটি করে দিচ্ছেন। অন্যের ছেড়া জুতা নিপূণ হাতের ছোয়ায় সেলাই আর রং কালি দিয়ে পরিপাটি করে দিলেও তাদের নিজেদের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হয়নি। অভাব অনটনে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলছে তাদের জীবন।
‘বাপ-দাদারা জুতা সেলাই করতেন তাদের পরে আমিও একই পেশায় কাজ করছি। এই কাজে সাত সদস্যের পরিবার এখন আর চলে না। কথাগুলো বলছিলেন ডোমার রেলস্টেশনের পাশে মুচির মোড়ের সন্টু দাস। দীর্ঘদিন ধরে জুতা সেলাই পেশায় নিয়োজিত তিনি।
ডোমার পৌর এলাকায় তার মতো এমন আরও অনেকেই আছেন, যারা ছেঁড়া জুতা সেলাই করে চলার উপযোগী করে দেন। বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনওরকমে চলছে তাদের জীবন।
মানিক দাস বলেন, “আমাদের মাঝে অনেকেই এই পেশা এখন ছেড়ে দিয়েছেন শুধু আমরাই এখনও পুরনো পেশা ধরে রেখেছি। সারাদিন কাজ করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হয়। এই টাকায় সংসার চালানো কঠিন। আমাদের সন্তানেরা পড়ালেখা করলেও সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা পায় না।”
ডোমার সোহাগ সুখ পল্লীর প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজসেবক মিজানুর রহমান বলেন, “রাস্তার পাশে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন তারা। রাস্তার ধুলা, গাড়ির ধোঁয়া, শব্দ, ইত্যাদি নিত্যদিনের সঙ্গী। ফলে তাদেরকে এক চরম অমানবিক, অস্বাস্থ্যকর ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কাজ করতে হয়। এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে চলে তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। গুরুতর অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনী চিকিৎসাসেবাও নিতে পারেন না। কারণ তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।”
নীলফামারী উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবু মুসা মাহামুদুল হক বলেন, নীলফামারীতে যারা পুরাতন জুতা-স্যান্ডেল মেরামত করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের প্রায় সবাই অর্থনৈতিক সংকটে দিন কাটায়। যদিও ইদানিং এই সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা অনেক কমে গেছে। কিন্তু তাদের আয়-রোজগার বাড়েনি। যা আয় করে তা দিয়ে কোনও রকমে চলে তাদের জীবন-জীবিকা।
বিডি প্রতিদিন/কালাম