বগুড়া সারিয়াকান্দিতে ছাগলের খামার গড়ে সফলতা পেয়েছে জামাল বাদশা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন। জামাল বাদশার দেখাদেখি স্থানীয় অনেক বেকার যুবকও মাংসের জন্য ছাগল খামার গড়তে তার সাথে পরামর্শ করছেন।
জানা যায়, সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচী ইউনিয়নের নারচী উত্তরপাড়া গ্রামের আমছার আলীর ছেলে জামাল বাদশা ছাগলের খামার গড়ে নিজের আয়ের পথ সৃষ্টি করেছেন। গত ২ বছর আগে ছাগলের খামার গড়া শুরু করেন। তার শুরু হয় ৬টি মাদী ছাগল দিয়ে। প্রায় দুই বছর পর তার খামারে দাঁড়ায় ৪৭টি ছাগল। এর মধ্যে তিনি ৮টি ছাগল বাচ্চা প্রায় ৪০ হাজার টাকায় ও ৬টি মাদী ছাগল প্রায় ৪০ হাজার টাকায় এবং আরও কয়েকটি ছাগল বিক্রি করেন। দুই বছরের মধ্যে লগ্নিকৃত মূলধন তার উঠে আসে। বিক্রির পর তার খামারে ১৮টি মা ছাগীসহ ৩৩টি ছাগল রয়েছে।
ছাগলের খামার গড়া জামাল বাদশা জানান, তার ছাগলগুলোকে খাওয়ানোর জন্য দেড় বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করেছেন। এ জমি থেকে ঘাস কেটে তিনি তার ছাগলদের খাওয়ান। ছাগলের জন্য বাড়তি কোনো কাঁচাঘাস তাকে টাকা দিয়ে কিনতে হয় না। মাঝে মাঝে চরে নিয়ে ছেড়ে দিলে চরের কাঁচা ঘাসও খেয়ে থাকে। এছাড়া তিনি নিজের খামারে দুপুরবেলা সামান্য পরিমাণ দানাদার খাবার দেন। ছোলা বুটের ভূষি, গমের ভূষি, সয়াবিনের খৈল, সরিষার খৈল এবং চালের কুঁড়া মিশিয়ে বাড়িতেই তিনি সাশ্রয়ী মূল্যে এ দানাদার খাবার তৈরি করেন।
তিনি জানান, হাটে বাজারের চেয়ে মাংস বিক্রেতাদের কাছে ছাগল বিক্রি করতে পারলে বেশি আয় হয়ে থাকে। স্থানীয় কিছু মাংস বিক্রেতা তার কাছ থেকে নিয়মিত ছাগল ক্রয় করে থাকে। বাজারে ছাগলের মাংসের চাহিদা থাকায় বিক্রি করতে তার কোনো সমস্যা হয় না।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় বিশালাকার চরাভূমি রয়েছে। এসব চরাভূমিতে ছাগলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচাঘাস রয়েছে। উপজেলার প্রায় পরিবারেই দু-একটি করে ছাগল রয়েছে। এ উপজেলায় ব্ল্যাক বেঙ্গল, যমুনাপাড়ি এবং তোতাপুরি ৩ জাতের ছাগল রয়েছে। এদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগই ব্ল্যাক বেঙ্গল। সাধারণত যাদের ৯টির বেশি ছাগল রয়েছে, তাদের ছাগল খামারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ হিসেবে সমগ্র উপজেলায় ১ হাজার ২০০টি ছাগল খামারি রয়েছে। চরাঞ্চলগুলোতে ছাগলের খামার সবচেয়ে বেশি।
খামারি জামাল বলেন, ছাগলের খামার করে তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। যাদের নিজের ঘাসের জমি আছে তারা অনায়াসেই ছাগলের খামার করতে পারেন। খামারে ৫০টি মাদি ছাগল থাকলে বছরে খরচ বাদে ৬ হতে ৭ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। খামার গড়াতে তার বাবা তাকে সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান, আশপাশের বেশ কিছু বেকার যুবক আসছেন, যারা ছাগলের খামার গড়তে চান। তাদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
জামালের বাবা আমছার আলী জানান, প্রথম দিকে চিন্তা থাকলেও এখন নেই। মাত্র দুই বছরে ছাগলের ভালো উৎপাদন হয়েছে। কিছু ছাগল বিক্রিও করা হয়েছে। মূলত খামারটি গড়া হয়েছে মাংসের জন্য। স্থানীয় হাটে-বাজারে ছাগলের মাংস এখন বিক্রি হয়ে থাকে ৮০০ টাকা কেজি। আর মাংস বিক্রেতারা এই ছাগল খামার থেকে সহজে কিনতে পারছে। ছাগলের মাংস যাতে বেশি হয়, সেভাবে প্রাণী কর্মকর্তাদের পরামর্শে পুষ্টিকর খাবার দিয়ে লালন-পালন করা হয়ে থাকে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার শাহ আলম জানান, সাধারণত ছাগল গাছের লতাপাতা, কাঁচাঘাস প্রভৃতি খায়। এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে ছাগলের চারণভূমি রয়েছে এবং গাছপালা রয়েছে। সেজন্য প্রায় পরিবারেই দু-একটি বা তার বেশি ছাগল রয়েছে। বাজারেও ছাগলের এবং ছাগলের মাংসের ভাল দাম রয়েছে। ছাগলের মাংস যেন বেশি হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে কাঁচা ঘাসের পাশাশি বিভিন্ন ধরনের দানাদার খাবার দিতে বলা হয়। বাজারে ছাগলের মাংসের চাহিদা প্রচুর। দিন যাচ্ছে আর এই চাহিদা বাড়ছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই