তিব্বতের নির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা দালাইলামা আজ নিশ্চিত করেছেন যে তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর একজন উত্তরসূরী থাকবেন। যা বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ অনুসারীদের আশ্বস্ত করেছে, ৬০০ বছরের পুরনো দালাই লামার ধারা অব্যাহত থাকবে। সেই সাথে তিনি বলেছেন, দালাইলামা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কারো হস্তক্ষেপেরও সুযোগ থাকবে না।
তবে এর প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, দালাইলামার পুনর্জন্ম কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ১৮ শতকে কিং রাজবংশের সম্রাটের প্রবর্তিত একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে বলেন, দালাইলামা, পঞ্চেন লামা এবং অন্যান্য মহান বৌদ্ধ ব্যক্তিত্বদের পুনর্জন্ম সোনার কলস থেকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। চীন সরকার ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার নীতি বাস্তবায়ন করে, তবে ধর্মীয় বিষয় এবং তিব্বতি জীবন্ত বুদ্ধদের পুনর্জন্ম পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু নিয়ম রয়েছে।
তিব্বতিদের মতে, তেনজিন গায়াতসো হলেন দালাই লামার ১৪তম পুনর্জন্ম। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের রাজধানী লাসায় চীনা সেনারা একটি বিদ্রোহ দমন করার পর থেকে বর্তমান দালাইলামা এবং হাজার হাজার অন্যান্য তিব্বতি ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এই বৌদ্ধ ধর্মগুরু পূর্বে বলেছিলেন যে জনসাধারণের চাহিদা থাকলেই দালাই লামার প্রতিষ্ঠান অব্যাহত থাকবে। তিনি আজ বলেছেন, গত ১৪ বছরে তিনি নির্বাসিত তিব্বতি প্রবাসীদের কাছ থেকে, হিমালয় অঞ্চল, মঙ্গোলিয়া এবং রাশিয়া ও চীনের কিছু অংশের বৌদ্ধদের কাছ থেকে একাধিক আবেদন পেয়েছেন, দালাই লামার প্রতিষ্ঠান অব্যাহত রাখার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছেন।
দালাইলামার এই মন্তব্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চীন। কারণ বেইজিং বহু আগে থেকেই বলে আসছে, দালাইলামার মৃত্যুর পর উত্তরসূরি নির্ধারণে তাদেরই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। তারা তাকে একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতা বলে বিবেচনা করে এবং তিব্বতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। চীন একাধিকবার জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা নিজস্বভাবে দালাইলামার উত্তরসূরি ঘোষণা করবে।
তবে দালাইলামা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের বৈধতা নেই। তিনি বলেন, গ্যাডেন ফোডরাং ট্রাস্ট ছাড়া অন্য কারো এই বিষয়ে কোনো অধিকার নেই। এটি একটি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় প্রক্রিয়া—এতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চলবে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল