ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে শত কোটি টাকার সম্পদের হদিস পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে গাজীপুরের ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ জমি জব্দ করেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি ইউনিয়নে ৭৪৪ দশমিক ১৪ শতাংশ জমি পাওয়া গেছে। পূর্বাচলে তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের ২০ কাঠার প্লট রয়েছে। এ ছাড়া বারিধারা ডিওএইচএসে তারিক সিদ্দিকের সাত তলা বাড়ি, বারিধারা কে ব্লকে স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট এবং ভাটারায় দুজনের তিনটি প্লট রয়েছে। আর এসব সম্পদের দলিলে যে মূল্য দেখানো হয়েছে, তা বর্তমান বাজার মূল্যে অনেক বেশি।
গেল জুনে দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ ওইসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।
এদিকে গতকাল তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তার ভাই ও শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকের গাজীপুর সদরের জমিসহ ১০ তলা ভবন জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এসব জমি ও ভবনের দাম দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যথাযথ আইন ও বিধিমোতাবেক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ওইসব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, তারিক আহমেদ সিদ্দিকের গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাধুরা মৌজায় ৩৮ শতাংশ জমি রয়েছে, এর দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ২০ লাখ টাকা। এই জমি তিনি কিনেন ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট। একই মৌজায় আরেকটি ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি পাওয়া গেছে, এখানেও দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৬ লাখ টাকা। একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর জমিটি কিনেন তিনি। তারিক সিদ্দিকের ২০২৩ সালে কেনা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের হিরানল মৌজায় ৫৫ শতাংশ জমি রয়েছে। এর দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০১১ সালে কেনা দাউদপুর ইউনিয়নে রোহিলা মৌজায় ৭ শতাংশ জমি, এর দলিলমূল্য ৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে হিরানল মৌজায় ৫ শতাংশের আরেকটি জমি, এর দলিলমূল্য ৯ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১২ সালে কেনা রোহিলা মৌজায় ৩৪৪ দশমিক ২৮ শতাংশ জমি রয়েছে, এর দলিলমূল্য ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে কেনা হিরানল মৌজায় ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ জমি, এর দলিলমূল্য ২৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। একই সালে কেনা একই মৌজায় ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ৮ শতাংশ, ২০২০ সালে কেনা ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০১১ সালে কেনা রোহিলা মৌজায় ১০ শতাংশ এবং বিরহাটা মৌজায় ১২ শতাংশ জমি রয়েছে।
একই সালে কেনা রোহিলা মৌজায় ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ জমি, একই মৌজায় ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ আরেকটি জমি, বিরহাটা মৌজায় ১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০১২ সালে কেনা রোহিলা মৌজায় ৩৭ শতাংশ জমি, ২০১১ সালে একই মৌজায় ৮ শতাংশের এবং ১০ শতাংশের আরও দুটি জমি, ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৪ শতাংশ জমি, ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ, ১৪ শতাংশ জমি রয়েছে। হিরানল মৌজায় ২০১৯ সালে কেনা ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ ও ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০১১ সালে কেনা রোহেলা মৌজায় ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জমি রয়েছে। ২০১৯ সালে কেনা হিরানল মৌজার ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ জমি, রোহিলা মৌজার ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ জমি, ২০১১ সালে কেনা একই মৌজার ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ জমি, ২৮ শতাংশ জমি এবং ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ জমি রয়েছে।
২০১০ সালে কেনা বিরহাটার মৌজার ৯ শতাংশ জমি, ২০১৯ সালে কেনা হিরানাল মৌজার ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। ভাটারায় তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের তিনটি প্লট রয়েছে। বারিধারা ডিওএইচএসে ১ নম্বর রোডে শাহীন সিদ্দিকের সাত তলা ভবনের নিচ তলার ১১০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটের অর্ধেক ৫৫০ বর্গফুট এবং পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তলার ২৭০০ বর্গফুটের ৩টি ফ্ল্যাট, ৫টি কার পার্কিং এবং স্বাভাবিকভাবে ছাদের অর্ধেক মালিকানা রয়েছে। বারিধারার বোরাক পার্ক ভ্যালিতে শাহীন সিদ্দিকের আট তলায় অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৩ হাজার ৬০৩.৫০ বর্গফুটের দুটি কার স্পেসসহ ১টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০২০ সালে কেনা রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নে তারিক সিদ্দিক ও শাহীন সিদ্দিকের হিরানল মৌজায় ৮ দশমিক ০২০০ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া পূর্বাচল নতুন শহরে ২৬ নম্বর সেক্টরে শাহীন সিদ্দিকের ৫ কাঠা করে দুটি, ২১ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠার আরেকটি প্লট রয়েছে, ৭ নম্বর সেক্টরে তারিক সিদ্দিকের প্লট এবং গাজীপুর চান্দনায় ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ আবাদি জমি রয়েছে।