এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশ বান্ধব ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তেঁজগাওয়ে বিসিকের বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণ, বিটাকের কার্যক্রম শক্তিশালী করার লক্ষে টেস্টিং সুবিধাসহ টুল ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং বিএসইসি এর এলইডি লাইট (সিকেডি) এ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন শীর্ষক চারটি প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গণ ভবন থেকে নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানার প্রকল্প এলাকায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কার্যক্রমের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। নরসিংদী থেকে সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী এডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার আশরাফ খান দিলীপ, নরসিংদী ৩ শিবপুর আসনের সাংসদ জহিরুল হক ভুইয়া মোহন, বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ মো: ইমদাদুল হক, প্রজেক্ট ডিরেক্টর রাজিউর রহমান মল্লিক, নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিমসহ জেলা প্রশাসন-পুলিশ প্রশাসনসহ প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও সুধিজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘোড়াশাল এবং পলাশে ২টি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মে. টন (বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মে. টন) দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষি পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষি ও খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন ফলমূল, তরিতরকারি সবজি উৎপাদন, মাছ-মুরগী ডিম, মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে অর্থাৎ ভ্যালু অ্যাডেড করতে পারলে আমরা যেমন বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হবো, পাশাপাশি নিজের দেশের মানুষেরও যেহেতু ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে সেখানে আমাদের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।
শিল্পায়নের সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতি এটা ঠিক কৃষি ভিত্তিক। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন আমাদের প্রয়োজন। শিল্পায়ন যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রফতানি করার সুযোগ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেই।
প্রসঙ্গত, নরসিংদী জেলার পলাশে ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট (জিপিইউএফপি)’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যমান ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (ইউএফএফএল) এবং পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (পিইউএফএফএল) এর স্থলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এমএইচআই) এবং গণচীনের চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নং-৭ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসি-৭) কনসোর্টিয়াম এ কারখানা নির্মাণ করছে। এ সার কারখানা নির্মাণের ফলে এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যে সর্ববৃহৎ সারকারখানা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে কাজ শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্থর অনুষ্ঠিত হলো। ইতিমধ্যেই এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই সার কারখানাটির প্রকল্পের ৭০ ভাগের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১০ হাজার ৪৬০.৯১ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রকল্পটি চালু হলে দৈনিক ২ হাজার ৮শ মেট্রিকটন করে বছরে ৯ লক্ষ ২৪ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদন সম্ভব হবে। যার ফলে সরকারের বিদেশ থেকে সার কিনতে হবে না। ফলে সরকারের ৬ হাজার কোটি টাকা সঞ্জয় হবে ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল