পাবনায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্র ব্যক্তিদের ভিজিএফ’র খাদ্য সহায়তার তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নে ভিজিএফের সুবিধাভোগীরা সচ্ছল ব্যক্তি, পাকা বাড়ি ও দশ বিঘা জমির মালিকও রয়েছেন। তালিকায় একই ব্যক্তির নাম একাধিকবার উল্লেখ করে তার নামে বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্র ব্যক্তিদের ভিজিএফ’র খাদ্য সহায়তার জন্য আটঘরিয়া উপজেলায় মোট ৯৪৭০টি কার্ড বরাদ্দ দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এর মধ্যে চাদভা ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ ১৭১০টি কার্ডের বিপরীতে ১৭.১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ ছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী ভিজিএফ কার্ড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভিটেবাড়ি বিহীনসহ ১২টি শর্তাদির চারটি পূরণ হলে এই তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। সেখানে দেখা গেছে, অসচ্ছল, দিনমজুর ও ভিক্ষুকদের বাদ দিয়ে সচ্ছল ব্যক্তি, পাকাবাড়ির মালিক ও একই ব্যক্তির নাম বারবার দেওয়ার মাধ্যমে চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ওই ইউনিয়নের রিকশাচালক নওসাদ আলী বলেন, ‘আমি দিন আনি দিন খাই, অথচ কার্ড পাইনি। চেয়ারম্যান ভুয়া নাম দিয়ে চাল তুলে নিচ্ছে, দ্যাশে দেহার কেউ নেই।’
চাঁদভা ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যান তার খেয়াল খুশিমতো নাম দিয়ে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। তদন্ত করলেই সঠিক তথ্য বেড়িয়ে আসবে। সরকার যে উদ্দেশ্যে এই ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে দুস্থদের সহায়তা করছেন, এই ইউনিয়নে সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যকে ধূলিসাৎ করছেন এই চেয়ারম্যান।
২০২২ সালের ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্র ব্যক্তিদের ভিজিএফ ভাতাভোগীদের নামের তালিকাটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম দুই পাতায় ৫২ জনের নামের তালিকা করা হয়েছে। সেখানে ২৮ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারীর নাম রয়েছে। অথচ দুর্যোগে ব্যবস্থাপনা শাখার নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে ৭০ ভাগ নারীর নাম অগ্রাধিকার দিতে হবে। ওই তালিকার প্রথম পাতায় মুঠোফোনের একটি নম্বর দশ জনের নামের পাশে দেওয়া আছে। আবার একটি এনআইডি নম্বর দ্বৈতভাবে দেওয়া আছে। এরকম একাধিক এনআইডি নম্বর অন্যের নামের পাশে দিয়ে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজশে চাল আত্মসাতের বিষয়টি সঠিক নয়। তবে তালিকায় কাদের নাম আছে সেটাও দেখার দায়-দায়িত্ব আমার না। সেখানে ট্যাগ অফিসাররা আছেন, তারা থেকে বিতরণ করছেন বলে তিনি সরাসরি দেখা করে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানান।
চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, দ্রুততার সাথে তালিকাটি করা হয়েছে। তাই ভুলত্রুটি হতেই পারে। আর কাজ করতে গেলে ভুল হবেই।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, এ রকম একটি অভিযোগে শুনেছি, তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আমি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার মাসু বলেন, চাঁদভা ইউনিয়নে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দুস্থ ও অতিদ্ররিদ্র ব্যক্তিদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তার তালিকা প্রণয়ন অনিয়মের অভিযোগ আমি পেয়েছি। পাওয়ার পর পরই ঈদের ছুটি বাতিল করে পাঁচজন ট্যাগ অফিসার নিয়োগের মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। তালিকাটি প্রস্তুতের কাজ করে থাকেন স্ব-স্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। সেখানে একই ব্যক্তির নাম বারবার উল্লেখ করা, সচ্ছল ব্যক্তির নামে কার্ড ইস্যু করে থাকেন, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিডি প্রতিদিন/এমআই