হবিগঞ্জে বন্যার পানি ধীরগতিতে কমছে। তবে কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেসব এলাকায় দিয়ে পানি কমছে, সেই সব এলাকার বন্যার্তরা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে বাড়িতে ফিরছেন। বাড়িতে ফিরলেও বাড়ির উঠানে হালকা পানি রয়েছে। ওই পানি দিয়ে চলাচল করায় তাদের পায়ে চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
এছাড়াও রান্নার ছোলাগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার কারণে বন্যার্ত রান্না করতে পারছেন না। তাদের মধ্যে শুকনো খাবারও বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে গেলে তা নেয়ার জন্য বন্যার্ত হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
আজমিরীগঞ্জের জলসুখার জালহাটির মুকসুদা বেগম জানান, বন্যায় আমাদের বাড়িঘর তলিয়ে গিয়েছিল। আমরা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাদের দেখতে কেউ আসেননি। এখন কিছুটা পানি কমায় বাড়িতে উঠেছি। কিন্তু ছোলা না থাকায় রান্না করে খেতে পারছি না। এছাড়াও পচা পানিতে চলাচল করায় পায়ে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। আমরা বিশুদ্ধ পানিও পান করতে পারছি না।
এ দিকে বন্যায় জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোপালপুরে ২০ মিটার, বানিয়াচংয়ের সুজাতপুর এলাকায় ৬০ মিটার খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙেছে। অপরদিকে আজমিরিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধের নিকলীর ঢালা এলাকায় ২০ মিটার, বদলপুর বাজারের কাছে ১০ মিটার ও নবীগঞ্জের চরগাঁওয়ে বিবিয়ানা নদীর বাঁধের ৮০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে।
হবিগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, হবিগঞ্জ, বানিয়াচং আজমিরিগঞ্জ নবীগঞ্জ উপজেলায় ২৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৮৭ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৮ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছির জানান, সড়ক মেরামতে ৮২ কোটি ৭৪ লাখ, পাঁচটি ব্রিজের জন্য ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. আশেক পারভেজ জানান, বন্যায় ১৫ হাজার ৬২৮ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন ধান, ১ হাজার ৭৪৩ হেক্টর শাকসবজি ও ৪৫ হেক্টর অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮৮ হাজার ৫৪ মেট্রিক টন ধান ও সবজি এবং ২২৫ মেট্রিক টন অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়েছে। জেলায় ১ লাখ ৩ হাজার ১৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, বন্যায় ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় ৫ হাজার ৮৫৩ জন খামার মালিকের ১৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৩৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিত হয়। অপরদিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল্লাহ জানান, জেলায় ৯৪টি স্কুল কলেজ মাদরাসা বন্যা কবলিত হয়।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ জানান, কালনী ও কুশিয়ারা নদীর ভাটিতে পলিমাটি জমা হওয়ায় পানি ধীরগতিতে কমছে। এখনো ওই ২টি নদীতে পানি বিপদসীমার ১ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে চলতি মাসে নতুন করে বন্যা হতে পারে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জানান, প্রতিদিনই পানি কমছে। আর পানি কমাই বন্যার্তরা আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ৫শ আশ্রয়ণ কেন্দ্র ২৪ হাজারের উপরে বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। কমে এখনও সাড়ে ৩শ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ১৯ হাজার বন্যার্তরা রয়েছেন।
খাদ্যের সংকট নেই জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ইতোমধ্যে ৮শ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও শিশুদের জন্য ৩০ হাজার প্যাকেট গুড়া দুধ বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর