দীর্ঘস্থায়ী ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় মৌলভীবাজারের হাওর অঞ্চলের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে দিন কাঠাচ্ছেন। জেলার হাওর তীরবর্তী এলাকার ৭০/৮০ শতাংশ ঘরে এখনও পানি। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে আবার কেউ কেউ ঘরে পানির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। কিছু পরিবার উজান এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলাকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় মানুষের মধ্যে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। শুকনো জায়গা না থাকায় পানিতে চলাফেলা করায় অধিকাংশ মানুষের পায়ে গা দেখা দিয়েছে। শহর কিংবা শহরতলির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বন্যার্ত মানুষ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, পানিবাহিত রোগ ড়ায়রিয়ায় ৪৯ জন, চর্ম ৫০জন, জ্বরে ১৪ জন, চোখের ভাইরাস ১২ জন, চোখে আগাতপ্রাপ্ত ৬ জন, সাপে কাটা ৪ জন, অন্যান্য রোগে ৩৭ জন সহ মোট ১৭২ জন শিশু, নারী ও পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে গত ৮দিনে জেলায় পানি বাহিত বিভিন্ন রোগে মোট ৭৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
উপজেলার প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষের সঙ্গে গবাদিপশু পাশাপাশি অবস্থান করছেন। কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল স্কুল এন্ড কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় পুরো নিচ তলায় গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। চলমান বন্যায় মৌলভীবাজারে মৌসুমি গরুর খামারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। অনেক খামারীরা গরু নিয়ে চরম বিপাকেও পড়েছেন। খাদ্য সংকটের কারণে কমছে গরুর ওজন। এবার লাভের চেয়ে লোকশানের চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। পানি বাড়ায় কোনো কোনা এলাকায় চুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারীরা রাত জেগে গরু পাহারা দিচ্ছেন। সরেজমিন দেখা যায়, জেলার হাওর পারের এলাকা বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় খামারীরা বাজার, ব্রীজ ও রাস্তার পাশে গরু রাখছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৭ উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের ২০ হাজার ৯’শ ৯টি গরু, ১ হাজার ৭’শ ৭০টি মহিষ, ৭ হাজার ৪’শ ১৫টি ছাগল ও ১ হাজার ৫’শ ৩৩টি ভেড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে খামারীদের সম্ভাব্য ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ১২ হাজার ৩’শ টাকা। আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে মৌলভীবাজার জেলায় কোরবানী যোগ্য গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে গরু ৪৩ হাজার ৪’শ ৯৪টি, মহিষ ২ হাজার ৮’শ ১৬টি, ছাগল ১২ হাজার ৬’শ ২১টি ও ভেড়া ৫ হাজার ২৬টি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নি¤œবিত্তরা ত্রাণ সামগ্রী পেলেও অভাব অনুটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মধ্যবিত্ত পরিবার। অভাবে থাকার পরেও কারো কাছে হাত পাততে পারছেন না। এদিকে পানি বন্দী এলাকায় কাজ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুররা। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাওর তীরের বাসিন্দারা।
সরেজমিন কুলাউড়া উপজেলার ভুকমিশইল ইউনিয়নে গেলে দেখা যায়, ইউনিয়নে যাতায়াতের প্রতিটি রাস্তা এখন পানির নিচে। স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির তলিয়ে গেছে। প্রতিটি হাটবাজার এখনও পানির নিচে। মানুষের চলাচলের কোনো জায়গা নেই। এসময় জাব্দা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রিয়াজুর রহমান বলেন, দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষ অবর্ণনিয় দুর্ভোগে পড়েছেন। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ। কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল ইসলাম সোহাগ বলেন, পানি না কমলে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। অনেকটা বিপর্যয় দেখা দিবে।
হাওর পাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, অতীতেও বন্যার পানি এসেছিল কিন্তু এ বছরের মতো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যার ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। অনেকটা পানির সাথে যুদ্ধ করে চলাফেরা করছি।
বিডি প্রতিদিন/এএম