টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সকল যাত্রীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুট ও এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ডাকাত দলের এক সদস্যের ৫ দিনের রিমাণ্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ্র এ রিমাণ্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে দুপুরে ডিবি পুলিশ ৭ দিনের রিমাণ্ড আবেদন করে ওই ডাকাত সদস্যকে আদালতে তোলা হয়। রিমান্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম রাজা মিয়া (৩২)। তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গৌরস্থান এলাকায় মৃত হারুন অর রশীদের ছেলে।
অপরদিকে ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন তার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। টাঙ্গাইলের কোর্ট ইন্সপেক্টর তানভীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে ওই নারী জানিয়েছেন, ৬ জন ডাকাত তাকে ধর্ষণ করেন। গলা টিপে ধরে মারধর করেন। তিনি ছাড়া আরও এক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকা থেকে রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। লুট হওয়া ৩টি মোবাইল ফোন তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মির পর রাজা মিয়া গাড়ি চালিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস অন্তত ২৪ জন যাত্রী নিয়ে নারায়নগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জে জনতা নামে একটি হোটেলে খাবারের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। সেখান থেকে সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রা করলে ৫ মিনিট যাওয়ার পর মূল সড়ক থেকে প্রথমে ৪ জন যাত্রী ওঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আরও ৩ জন যাত্রী ওঠেন। পরে আরও ৫ মিনিট যাওয়ার পর নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া আরও ৩ জন যাত্রী সেজে বাসে ওঠেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয় আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে। যাত্রীরা ঘুমানোর একপর্যায়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের নাটিয়াপাড়া এলাকা পৌঁছালে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন। প্রথমে পুরুষ যাত্রীদের তাদের পোশাক খুলে হাত মুখ বাঁধা হয়। অপরদিকে নারী যাত্রীদের বাসের পর্দা ও সিটের কভারখুলে মুখ এবং হাত বেঁধে ফেলা হয়। পরে অস্ত্রের মুখে বাসের চালক ও হেলপারকে জিম্মি করা হয়। তখন ডাকাতদলের সদস্য রাজা বাস চালান।
টাঙ্গাইলের গোড়াই এলাকা থেকে বাসটিকে ইউর্টান করে এলেঙ্গা হয়ে ময়মনসিংহ রোড ধরে যেতে থাকে। এরই মধ্যে যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল, টাকা, কানের দোল, হাতের বালা, গলার চেইন লুট করে নেওয়া হয়। পরে ৫ থেকে ৬ জন ডাকাত সংঘবদ্ধভাবে গাড়িতে থাকা এক নারীকে ধর্ষণ করেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে পালিয়ে যান তারা।
এ ঘটনায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুষ্টিয়ার হেকমত নামে ওই বাসের যাত্রী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন
নির্যাতনের শিকার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। ভুক্তভোগী ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. রেহেনা পারভীনের নেতেৃত্বে এ ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টার প্রাথমিক আলামত পাওয়া গেছে। তার সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই নারী বাঁধা দেওয়ার ফলে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে সোয়াব পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাদিকুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারীর প্রাথমিক ডাক্তারী পরীক্ষায় শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, তা সোয়াব পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ