পরকীয়ায় ধরা খেয়ে মারধরের শিকার হন নুর ইসলাম। মারধর খাওয়ার পর পরিবারের পরামর্শে নুর ইসলামকে ওই রাতেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন নুর ইসলাম তার শ্যালক ওমর ফারুকের কাছে বগুড়ায় গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি আফরিন জুটমিলে চাকরি নেন। দীর্ঘদিন সেখানেই তিনি পলাতক অবস্থায় ছিলেন। পলাতক থেকে নিজ স্ত্রীকে দিয়ে অপহরণ ও হত্যা মামলা সাজানো হয় প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে। তবে, পুলিশের অনুসন্ধানে তাদের সেই মিশন সফল হয়নি।
গত ১৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রামে পরকীয়ায় ধরা খেয়ে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, গুম-অপহরণের অভিযোগে গত ২৭ জুলাই স্থানীয় ১৪ জনের বিরুদ্ধে ফরিদপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগম। আদালত মামলাটি সালথা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। থানা থেকে মামলাটি তদন্তভার দেয়া হয় এসআই ফরহাদ হোসেনকে।
১৯ আগস্ট গভীর রাতে বগুড়া সদর থেকে মামলার ভিকটিম নুর ইসলামকে উদ্ধার করে সালথা থানা পুলিশ। রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সালথা থানার ওসি। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
ভিকটিম নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগম মামলার এজাহারে উল্লেখ্য করেন, আসামিদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা ও গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে বিরোধ চলছিল। তার স্বামী একজন দরিদ্র কৃষক। কিছুদিন আগে গাছ কাটা নিয়ে মামলার এক আসামি আনিচের সাথে আমার স্বামীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত ১৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে তার স্বামী স্থানীয় সুইচগেট বাজারে চা খেতে যায়। রাত ১১টা বেজে গেলেও সে আর বাড়িতে ফিরে না। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আমি ও আমার সন্তান যখন স্বামী নুর ইসলামের অপেক্ষায় রয়েছি, তখন মামলার আরেক আসামি ছিদ্দিক আমাদের বাড়িতে এসে আমার শ্বশুরকে বলে তোমার ছেলে কোথায়?। আমরা বলি, সে বাজারে চা খেতে গেছে। তখন ছিদ্দিক আমার শশুরকে বলে, তোমার ছেলের লাশ রাঙ্গারদিয়া কুমার নদে ভাসছে, যাও গিয়ে লাশ নিয়ে আসো। পরে আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে বাড়িতে চলে আসি। পরের দিন সকাল ৯টার দিকে আমার ছেলে তার ফেসবুক আইডিতে ঢুকে একটি ভিডিও পোস্টে দেখেন। সেখানে দেখা যায়, আসামিরা আমার স্বামীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করছে। তারপর থেকে তার আর খোঁজ নেই। এতে আমরা সন্দেহ ও আশঙ্কা করছি যে, আমার স্বামীকে অপহরণের পর খুন করে তার লাশ গুম করে রেখেছেন আসামিরা।
তবে আসামিরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রায় এক মাস ধরে এলাকা ছাড়া করে রেখেছে নুর ইসলামের স্ত্রী। মিথ্যা মামলা দেওয়ায় আমরা তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করবো। সঠিক তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদঘাটন করায় সালথা থানা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সালথা থানার এসআই ফরহাদ হোসেন বলেন, মামলাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত শুরু করার পর অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাই। এসব তথ্যের সূত্র ধরেই নুর ইসলামকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। মূলত তদন্ত করে আমি যেটা পেয়েছি তা হল, মামলার আসামিদের একজনের বোনের সাথে পরকীয়া ছিল নুর ইসলামের। ঘটনার রাতে ওই আসামির বোনের সাথে পরকীয়ায় ধরা খেয়ে মারধরের শিকার হন নুর ইসলাম।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, নুর ইসলামকে লুকিয়ে রেখে তার স্ত্রী মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা তাকে জীবিত উদ্ধার করে আদালতে পাঠাই। আদালত তার পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন। এখন আমরা নুর ইসলামের স্ত্রী আন্না বেগমকে খুঁজছি। মিথ্যা মামলা দেয়ায় তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর