বগুড়ায় চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়াসহ অন্যান্য সার মজুদ রয়েছে এবং কৃষকের প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। ডিলার কর্তৃক সরকারি মূল্যে সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে, যা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছে জেলা প্রশাসকসহ সার বীজ মনিটরিং কমিটি। এ কারণে আগামীতে কোন ফসলের জন্যই সারের সংকট হবে না বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বগুড়ায় চাহিদা অনুযায়ী সার পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। বাম্পার ফলনের আশায় মাঠে নিড়ানীসহ ধানক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে চাষীরা।
উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া জেলায় ধান, সবজি ও আলুর আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। আমনের ভরা মৌসুমে কৃষান-কৃষানীরা বাম্পার ফলন ফলাতে ইতিমধ্যেই নিড়ানী শুরু করেছে। বগুড়ায় মোট আবাদী জমির পরিমান ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। বর্তমানে মাঠে শাকসবজি আবাদের পাশাপাশি রোপা আমন ধান রোপন চলমান রয়েছে। জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ অর্জিত হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শতভাগ জমিতে রোপন সম্পন্ন হবে। রোপনকৃত জমিতে প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে ইউরিয়া সারের প্রয়োগ চলছে।
এছাড়াও জেলায় অদ্যবধি ৩ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর জমিতে শাকসবজি ও ৭২৫ হেক্টর জমিতে আগাম মরিচের চাষ হয়েছে। জেলার সোনাতলা, কাহালু, নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে চাষীরা। কৃষকদের সাথে কৃষানীরাও ব্যস্ত। সদরের লাহিড়ীপাড়ার চাষী মোজাম্মেল হায়দার জানান, গত বছরও ভালো ফলন পেয়েছি, এবারো ভালো ফলনের আশায় ক্ষেত পরিচর্যা করছি। নন্দীগ্রামের রনবাঘার চাষী টিপু সুলতান বলেন, সার নিয়ে কোন সমস্যা নেই, আমরা ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছি। জমিতে সার দেয়াসহ এখন নিড়ানীর কাজ চলছে।
এদিকে জমি চাষে সারের কোন সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ রয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন। তিনি জানান, জেলার বাৎসরিক চাহিদার বিপরীতে নিয়মিতভাবে প্রত্যেক মাসের সার মাসের শুরুতেই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সে অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ইউরিয়া ৬ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৬০ মেট্রিক টন, এমওপি ১ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ২ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন সারের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। ফলে আগামীতে ফসলের জন্য সারের কোন সংকট হবে না।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আগস্ট মাসে জেলার বিপরীতে ইউরিয়া ৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন, এমওপি ১ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন, এবং ডিএপি ২ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ রয়েছে। চলতি মাসের বরাদ্দ হতে ইউরিয়া ৭ হাজার ২০৯ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৩৯ মেট্রিক টন, এমওপি ১ হাজার ৬১ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ৮শ ৮৫ মেট্রিক টন সার ডিলার পর্যায়ে উত্তোলনপূর্বক কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় ইউরিয়া সার ১ হাজার ২০৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৮ শ ৯০ মেট্রিক টন, এমওপি ৫শ ৭০ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ১হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন সারের মজুদ রয়েছে। এছাড়া গত ২০১১-২২ অর্থ বছরে জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের বিপরীতে ইউরিয়া ৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ৫০৭ মেট্রিক টন, এমওপি ১ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ২ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ ছিল।
এ বছর জেলায় অতিরিক্ত ২ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যয়ে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এদিকে বগুড়া জেলার সার উত্তোলন, বিতরণ ও মজুদ পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুম আলী বেগসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, সারের কালোবাজারী ও সরকারি নির্ধারিত মূল্য নিশ্চিতকল্পে জেলায় নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় সারের মজুদ সন্তোষজনক। কৃষকদের আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকের পাশে রয়েছে। কোন সার ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/এএ