পদ্মা নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর, চরবাগডাঙ্গা ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করার সাথে সাথে এলাকাগুলোতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
অনেকোর বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে আবার অনেকেই ভাঙন আতঙ্কে বাড়ি-ঘরসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যাচ্ছে। গত দশ বছরে নারায়নপুর, চরবাগডাঙ্গা, পাঁকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়নে হাজার হাজার একর জমি, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।বর্তমানে আবারও নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নারায়নপুর ও চরবাগডাঙ্গা এবং শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও দূর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহরপুরে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে শিবগঞ্জের দূর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর-রঘুনাথপুর থেকে শুরু করে নারায়নপুর ইউনিয়নের জহুরপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ কি.মি জুড়ে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে প্রায় ৩০০ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় তারা নিশ্ব হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। আর ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে নারায়নপুর ইউনিয়নের চরের বাতিঘর খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নারায়নপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়সহ ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্র, ২টি উচ্চ বিদ্যালয়, মাদরাসা, সদ্য নির্মিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, সোলার প্ল্যান্ট এবং স্থানীয় হাটবাজারসহ কয়েকশ একর ফসলি জমি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত নারায়নপুর এলাকার বাদল রহমান জানান, বত্রিশরশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন তারা, এখানে তাদের বাপ-দাদার জমিজমা ছিল। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে সবকিছুই চলে গেছে।
একই এলাকার সমাজসেবী আব্দুল মোমিন জানান, কয়েকবছর ধরে এ ইউনিয়নে ভাঙনের তীব্রতা দেখা দেওয়ায় বাড়িঘর ও জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। তাই ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া না হলে মানচিত্র থেকে এ ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। এমনকি যেসব স্থাপনা রয়েছে সেগুলোও হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে নারায়নপুর ইউনিয়নের ৪নং ইউপি সদস্য মো. আব্দুল আলিম ও সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জাহানারা খাতুন জানান, বত্রিশরশিয়া, খলিফাচর ও ডাকাতপাড়া গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে। এখন সেখানে যারা আছে তাদের নির্ঘূম দিন কাটছে। এ মুহূর্তে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেললে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তারা। অপরদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, জামাইপাড়া ও নরিশয়া গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়েছে।
সোমবার পাঁকা ও নারায়নপুর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ভাঙনের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং ভাঙন রোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম