আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিএনপি নেতাদের কটূক্তির প্রতিবাদে দলীয় নেতাকর্মীদের বিবেধ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সদর-সুবর্ণচর আসন থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় এ সাংসদ দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় কালে এসব কথা বলেন।
এর আগে শনিবার বিকেলে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সামছুদ্দিন জেহানের বাড়িতে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে এক আলোচনা সভা ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানান। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে এ নিয়েই মতবিনিময় সভা ও প্রস্তুতি সভা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সামছুদ্দিন জেহান জানান, গত কয়েক দিন থেকে সদর ও সুবর্ণচর আসনের মাটি ও মানুষের নেতা এমপি একরাম চৌধুরী বিএনপি নৈরাজ্যের ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি চলছে।
এ সময় নোয়াখালীতে সম্প্রতি বিভিন্ন সভায় বিএনপি নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কটূক্তি করেছে বলে মন্তব্য করে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির যে তাণ্ডব নোয়াখালীর ওপর, বিশেষ করে আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে কটূক্তিমূলক বক্তব্য রেখেছে, আমি সিঙ্গাপুরে ছিলাম, আমি আসলে মানসিক কষ্ট পেয়েছি। সাংগঠনিক পদ আমার না থাকলেও আমি নোয়াখালী সদর এবং সুবর্ণরের সাংসদ। একজন সরকারি দলের সাংসদ হিসেবে আমি চুপ থাকতে পারি না। এর জবাব দেওয়ার জন্য আপনারা সকলে আজকে নিজ দায়িত্বে এখানে এসেছেন, আমি জানি আপনাদের ভেতরেও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কারণ আপনারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন, শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন। এই রক্তক্ষরণের কারণে আপনারা এখানে এসেছেন। আপনাদের পদ পদবি না থাকলেও আপনাদের সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পর্কে আমার একটা দৃঢ় ধারণা আছে। আমরা ১০ তারিখ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এবং সুবর্ণচরে থানার সামনে ১২ তারিখ আমাদের নেত্রী সম্পর্কে বিএনপি নেতাদের কটূক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ডেকেছি, আমরা প্রতিবাদ সভা করবো। যার যার অবস্থান থেকে আপনারা নেতাকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার কর্মী হিসেবে যতটুকু পারেন উপস্থিত থাকবেন, আমি একজন এমপি হিসেবে আপনাদেরকে নেতৃত্ব দিব।’
এমপি হিসেবে নিজের এ ধরনের সভা আহ্বানের যৌক্তিকতা তুলে ধরে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দল আওয়ামী লীগ। প্রটোকলে ডাকলে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তারা ডাকবেন, কিন্তু আজকে আমরা যারা শেখ হাসিনার সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। আমরা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগকে বলবো যদি আপনারা মনে করেন আপনাদের এ সভায় আসা উচিত আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনারা আসবেন।’
দলে আর কোনো বিভক্তি দেখতে চান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দলকে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে চাই। দল আমাদের সকলের। দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকবে কিন্তু আমি গ্রুপিং করবো না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে দলকে আমি ২১ বছর আমার রক্ত দিয়ে তিলে তিলে তুলে ধরেছি। সে দলকে আমি গ্রুপিং করে নষ্ট করতে দিব না। শেখ হাসিনা যাকে নমিনেশন দিবে আমরা তার ভোট করবো। আমি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিকে বলবো আসেন আমরা সবাই মিলে এই দৃষ্কৃতিকারী; যারা নেত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করছে তাদের প্রতিহত করি।
জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও দুই যুগ্ম আহ্বায়ককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মানুষের জন্য রাজনীতি করলে আসেন সবাই মিলেমিশে কাজ করি এবং মিলেমিশে রাজনীতি করলে আমাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের পরিচয় হলো আমরা শেখ হাসিনার সৈনিক।’
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলেন, ‘একরামুল করিম চৌধুরী আমাদের দলের এমপি। তাঁর সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।’ আগামী ১০ এবং ১২ সেপ্টেম্বর এমপির প্রতিবাদ সভা আহ্বান এবং আহ্বায়ক কমিটিকে সেই সভায় আমন্ত্রণ জানানোর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান খায়রুল আনম সেলিম।
জেলা আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদ উল্লাহ খান সোহেল বলেন, ‘তিনি (এমপি একরামুল করিম চৌধুরী) ঐক্যের ডাক দিয়েছেন’।
এমপির প্রতিবাদ সভা আহ্বান এবং আহ্বায়ক কমিটিকে সেই সভায় আমন্ত্রণ জানানো প্রসঙ্গে শহিদ উল্লাহ খান সোহেল বলেন, ‘এটাতো আমার ব্যক্তিগত বিষয় না, দলীয় ফোরামে আলাপ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।’ তাই এ বিষয়ে আমি একা কিছু বলতে চাই না’।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা