২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:১২

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে শিবির-ছাত্রদল, চাপের মুখে বাতিল ঘোষণা

মাগুরা প্রতিনিধি

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে শিবির-ছাত্রদল, চাপের মুখে বাতিল ঘোষণা
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নে যুবদল নেতা, শিবির কর্মী, অস্ত্র-নারী পাচার মামলার আসামি ও মাদকাসক্তদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতা-কর্মীদের অনেকে পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বীরেন শিকদার স্কুল অ্যান্ড কলেজের হলরুমে আয়োজিত সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। 
 
পরে উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি বাতিলের দাবিতে সেখানকার সেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ স্থানীয় সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মেহেদী হাসান মিলনের নেতৃত্বে পলাশবাড়িয়া বাজারে গত শনিবার বিকালে মানববন্ধন করে। চাপের মুখে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুজন শিকদার সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম সাগর এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
 
মহম্মদপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুজন শিকদার, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাগর স্বাক্ষরিত কমিটি ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত কমিটিতে দেখা যায়, বাবুখালি ইউনিয়েনে আলী হাসানকে সভাপতি, মুন্সি মোহাম্মদ মঞ্জুকে সাধারণ সম্পাদক করে যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে স্থান পাওয়া সভাপতি আলী হাসান যুবদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে অভিযোগ। তার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এ ঘটনায় কমিটি ঘোষণার পরপরই বাবুখালি ইউনিয়নের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি, যুগ্ম- সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, অর্থ সম্পাদকসহ একাধিক সদস্য সদ্য ঘোষিত এই কমিটির প্রাপ্ত পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
 
পলাশবাড়িয়ার নতুন কমিটিতে যুবদল নেতা আহাদ খানকে সাধারণ সম্পাদক এবং অস্ত্র মামলার আসামি নান্নু মিয়াকে সহ-সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। নান্নু মিয়া ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ধারালো অস্ত্রসহ স্থানীয় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। যে ছবি ওই সময় ফেসবুকে প্রকাশিত হয়। পলাশবাড়িয়ার এই কমিটি ঘোষণার পর এলাকায় আলোচনা সমালোচনার এক পর্যায়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের তোপে মুখে পড়ে রাতেই বিতর্কিত এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দপ্তর সম্পাদক আশিষ সরকার স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্রে বিলুপ্ত এই কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। নহাটা ইউনিয়নের বিতর্কিত লোকদের দিয়ে কমিটি করায় ঘোষিত কমিটি থেকে সাথে সাথে পদত্যাগ করেছেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রানা শিকদার ও দপ্তর সম্পাদক মাছুদ মোল্যা। অভিযোগ রয়েছে বিনোদপুর ইউনিয়নের কমিটিতে রাজাকার ও জামায়াত নেতা গোলাম আকবরের ভাতিজা মশিউর রহমানকে সহ-সভাপতি, মহম্মদপুর জামায়াতে ইসলামের আমীরের ভাই খালিদ সাইফুল্লাহ লিটুকে প্রকাশনা সম্পাদক, যুবদল কর্মী তারিকুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। মশিউর রহমানের ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকার বিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালায়। কমিটিতে বিতর্কিত এসব ব্যক্তিদের ঠাঁই দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঘোষিত এই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। রাজাপুর ইউনিয়নে বিএনপিকর্মী জামির হোসেনকে সহ-সভাপতি, যুবদল কর্মী ইসরাফিল ইসলামকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিএনপি কর্মী ইলিয়াস হোসেনকে সদস্য এবং জামায়াত কর্মী বক্কার হোসেনকে সদস্য করায় এই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। 
 
এ বিষয়ে বিনোদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাগুরা জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ব অ্যাডভোকেট সাজিদুর রহমান সংগ্রাম বলেন, ‘আমাদের না জানিয়ে বিএনপি জামায়াত এবং শিবির কর্মী দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশ অপরিচিত মুখ’। 
 
রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘কমিটিতে স্থান পাওয়া অর্ধেকেরে বেশী লোক শিবির ও বিএনপি কর্মী। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে অভিযোগ করেছি। কমিটি বাতিল করতে বলেছি’। 
 
পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের সভাপতি এমডি গোলজার রহমান বলেন, ‘যাদের কমিটিতে আনা হয়েছে তাদের অধিকাংশ শিবির ও ছাত্র দলের। বিএনপির শাসনামলে তারা বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানি করেছে। কমিটির সভাপতি নারী পাচার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সহ-সভাপতি অস্ত্র মামলার আসামি। 
 
মহম্মদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম চুন্নু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় এমপির কাছে অভিযোগ করেছি’। 
 
মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাকে কিছু না জানিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি করা হয়েছে তাতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ বিষয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
 
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাগর বলেন, আওয়ামী পরিবারের সদস্যদেরই কমিটিতে আনা হয়েছে। পলাশবাড়িয়া কমিটি নিয়ে অভিযোগ আসায় সাথে সাথে আমরা কমিটি ভেঙ্গে দিয়েছি।  যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না। 
 
মহম্মদপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সুজন শিকদার বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার করা হচ্ছে। শুধুমাত্র পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের কমিটি গঠনে আমাদের কিছু ভুলত্রুটি ছিল।
 
স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক মাগুরা জেলার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ড. ওহিদুর রহমান টিপু বলেন, কমিটি করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে বিএনপি জামায়াতের কর্মী দিয়ে কমিটি করার অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। 
    
এ বিষয়ে পলাশবাড়িয়ার সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নতুন কমিটির সহ-সভাপতি নান্নু মিয়া বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়। 
 
একই ইউনিয়নের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহাদ খান বলেন, ‘একসময় যুবদল করতাম। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে এখনো আছি।’
 
বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর