মৃত্যুর ১৫ দিন পর মাকে জীবিত দেখিয়ে দুই মেয়ে নিজেদের নামে সাড়ে ৫ শতক জমি দলিল করে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকমাস আগে জয়পুরহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মৃত ব্যক্তির নামে দলিল হওয়ার এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়।
মৃত ব্যক্তির পরিবার ও জয়পুরহাট সাব রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত কারণে জয়পুরহাট সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের বিধবা স্ত্রী সহিদা বিবির (৬০) মৃত্যু হয় গত ১৩ জুন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। মৃত্যুর পর সহিদা বিবির নামে থাকা ১৩ শতক জমি সন্তানরা ভাগ করে নেয়। কিন্তু মৃত্যুর ১৫ দিন পর তার দুই মেয়ে উত্তর জয়পুর গ্রামের ফিরোজা বিবি ও জিতারপুর গ্রামের জরিনা বিবি মা সহিদা বিবিকে জীবিত দেখিয়ে গত ২৮ জুন সাড়ে ৫ শতক জমি জয়পুরহাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল করে নেয়।
দলিলে জমির দাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে সহিদা বিবিকে। স্থানীয় দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গত ৩ অক্টোবর সরবরাহ করা মৃত্যু নিবন্ধন সনদে দেখা গেছে, সহিদা বিবির মৃত্যু হয়েছে গত ১৩ জুন। আর মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে বার্ধক্য।
সহিদা বিবির নাতী (ছেলের সন্তান) মামুনুর রশিদ বলেন, দাদির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া জমির সাড়ে ৫ শতক তার বাবা শহীদুল ইসলাম ওয়ারিশ সূত্রে ভাগ পেয়েছেন। কিন্তু ভাগ পাওয়া জমি দখলে নেওয়ার পর তার দুই ফুফু ফিরোজা ও জরিনা হুমকি দিয়ে বলেছেন পরে দলিল বের হলে জমি ফেরত দিতে হবে। এতে তার সন্দেহ হলে তিনি স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সহিদা বিবি জীবিত অবস্থায় কোনো দলিল করেছেন কি-না তার খোঁজ নিতে গিয়ে বিষয়টি জানাজানি হয়।
তিনি বলেন, দাদি সহিদা বিবির জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করে গত ২৮ জুন তার দুই ফুফু সাড়ে ৫ শতক জমি নিজেদের নামে দলিল করে নিয়েছেন। দাদির কাছ থেকে পাওয়া জমিতে পুনরায় তারা ভাগ নেওয়ার জন্যই এই নকল দলিলের সৃষ্টি করেছে।
দলিল লেখক সাধন চন্দ্র জানান, তিনি স্বাক্ষর করলেও ওই দলিলের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি খুবই অসুস্থ। রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক ফারাজুল ইসলাম ওই দলিলে তার স্বাক্ষর নিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি একশ টাকা পেয়েছেন।
ফারাজুল ইসলাম দলিলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। মৃত ব্যক্তিকে দিয়ে কোনো দলিল হয়নি। শুনেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সহিদা বিবির বড় মেয়ে উত্তর জয়পুর গ্রামের ফিরোজা বিবির বাড়িতে গেলে তিনি দেখা করেননি। এ সময় তার ছোট বোন জরিনা বেগম বলেন, তার বোন বাড়িতে নেই। এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার দোস্ত মোহাম্মদ মৃত ব্যক্তিকে দাতা দেখিয়ে জমি দলিল করে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গতকাল বিষয়টি জেনেছি। দাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি নকল করে এই দলিল করা হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পারিনি। তবে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে এমন জাল দলিল করার পেছনে কারা জড়িত আছে, সেটার বিষয়ে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই