প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার। এখানকার ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এই জেলাকে পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনাময় হিসেবে গড়ে তুলেছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে বিভিন্ন কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির এক সভায় পর্যটন শিল্পে বিকাশ, সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে ১৫টি কর্ম পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন হবে। ইতিমধ্যই গৃহীত এই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসক।
পরিকল্পনাগুলো হলো-পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জেলার প্রতিটি রেল স্টেশনে পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা ও প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি করা। নতুন নতুন পর্যটন স্পটগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যাপক প্রচার করা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে দর্শনার্থীদের ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া। পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টে খাবার মূল্য ও রাত্রীযাপনের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া। ট্যুর গাইড, ট্যুর অপারেটর ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান ও সেবার মান বৃদ্ধি করা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এ জেলায় আসা পর্যটকদের নিকট তুলে ধরা। লাউয়াছড়ায় লেকের উন্নয়ন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু করা ও প্রতিটি পর্যটন স্পটে অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোর তালিকা রাখা।
জাতীয় তথ্য বাতায়ন জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টের তথ্য আপডেট রাখা। পর্যটন সংশ্লিষ্ট পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে পর্যটন স্পটগুলোতে বিপণনের ব্যবস্থা করা। জেলার বর্ষিজোড়া ইকোপার্কটি পুনরায় চালু করা। ‘জলে গ্রাম অন্তেহরি’ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনে পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এক কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন করা।
রাজনগরের বিষ্ণুপদধাম ও কুলাউড়ার রঙ্গীরকুল আশ্রম পরিদর্শনে আসা দর্শনার্থীদের আবাসনের সুযোগ করে দেওয়া। জেলা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হাউজ কিপার, সেইফ ট্যুরিজম হসপিটালিটি কোর্স সম্পন্নকারীদের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ করে দেওয়া। এছাড়া জেলার পর্যটনকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিকট তুলে ধরার জন্য ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, এই ১৫ কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জেলার পর্যটন শিল্পের চেহারা বদলে যাবে। একই সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, মাঠ পর্যায়ে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেই এই সিদ্ধান্তগুলো এসেছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই জেলার পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবে। আর এভাবেই পর্যটনের উন্নয়নে যে সংকটগুলো আসবে, আমরা স্টোক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে সেগুলো সমাধানের সিদ্ধান্ত নেব।
বিডি প্রতিদিন/এমআই