ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতকাল রাত থেকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে দমকা হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় সেন্টমার্টিনে নোঙর করে রাখা ১৩টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। উড়ে গেছে দ্বীপের বেশকিছু ঘরের চাউনি। নাফ নদীসহ সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। আগামীকাল মঙ্গলবার ভোরে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আজ সোমবার সকাল থেকে উপকূলের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে তাদের আগ্রহ নেই বলে জানা গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ এরফানুলক হক চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই উপজেলায় ৭৮টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সেন্টমার্টিনের সকল হোটেল-মোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাগরে বুকে জেগে উঠা সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপকে বিশেষ করে নজরে রেখেছি। এসব দ্বীপে জনসাধারণকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে মাইকিং করে সচেতন করা হয়েছে। তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান,‘ঘূণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সকাল থেকে প্রচণ্ড হাওয়া শুরু হয়েছে। তবে ভাটার কারণে সাগরে পানি একটু কমেছে। ইতোমধ্য আঘাতে জেটিতে নোঙরে থাকা ১৩টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। তারমধ্যে সমুদ্রে ভেসে গেছে দু’টি ট্রলার। বেশকিছু ঘরের চাউনি উড়ে গেছে। উপকূলের লোকজনকে সরিয়ে দ্বীপের আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং চলছে।’
তিনি আরও জানান, ‘এখন পর্যন্ত কেউ আশ্রয় কেন্দ্র যায়নি। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের দিয়ে দ্বীপের সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।’
দ্বীপের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ জানান, ‘সকাল থেকে দ্বীপে বাতাস বেড়েছে। দ্বীপের চেয়ারম্যানসহ একটি দল মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। এখনও মাইকিং চলছে, তবে কেউ সাড়া দিচ্ছে না।’
আরেক বাসিন্দা জিয়াউল হক জিয়া জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় আসলে দ্বীপের বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটে। কারণ সমুদ্রের মাঝে আমাদের বসতি। এছাড়া আগের তুলনায় দ্বীপের অবস্থা ভালো না। সমুদ্রে পানি বাড়লে দ্বীপের চারদিকে ভেঙে যায়।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় জেলার উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন