ফেনীর সোনাগাজীতে দিন-দুপুরে বোমা ফাটিয়ে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের জমাদার বাজারের অর্জুন স্বর্ণ শিল্পালয়ে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ী (৫৫)।
আহত অর্জুনকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পথচারী লেদু মিয়াও আহত হয়েছেন।
ঘটনার পরপরই ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসানের নেতৃত্বে ফেনী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অং প্রু মারমা, সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মু. খালেদ হোসেনসহ পুলিশ ও পিবিআই’র সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুইটি মোটরসাইকেলে করে হেলমেট পরে ছয়জন অস্ত্রধারী ডাকাত অর্জুন স্বর্ণ শিল্পালয়ের সামনে আসে। এদের মধ্যে চারজন ডাকাত ওই স্বর্ণের দোকানে প্রবেশ করে এবং দুইজন ডাকাত ১০-১২টি বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এসময় তারা ৪-৫ মিনিটের মধ্যে দোকানের শো-কেচের গ্লাস ভেঙে স্বর্ণ ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। দোকানের মালিক অর্জুন চন্দ্র ভাদুড়ী বাধা দিলে ডাকাতরা তাকে এলোপাতাড়ি মাথায় কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় লেদু মিয়া নামে একজন এগিয়ে আসলে তাকে বোমা মেরে আহত করে ডাকাতদল। পরে আবারও বোমা ফাটাতে ফাটাতে তারা মোটরসাইকেলে করে দাসেরহাট-কাশ্মিরবাজার সড়ক দিয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাতদল ঘটনাস্থলে একটি ধারালো চাপাতি রেখে গেছে।
তবে কি পরিমাণ স্বর্ণ ও টাকা লুট হয়েছে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অর্জুনের বাড়ি চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের ভাদুড়ি বাড়ি হলেও তিনি স্বপরিবারে ফেনীতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লেদু মিয়া জানান, অর্জুন স্বর্ণ শিল্পালয়ের পাশের দোকানে আমি ভাত খাচ্ছিলাম, ভাত খাওয়ার এক পর্যায়ে জুয়েলার্স দোকানে ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে বাইরে আসলে দেখি দুইজন ডাকাত বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষিপ্তভাবে বোমা নিক্ষেপ করে, চারজন ডাকাত দোকানের ভিতরে অর্জুনকে কোপাচ্ছে ও দোকানের স্বর্ণ ব্যাগে ভরতে দেখা যায়। আমাকে দেখে ডাকাতরা বোম মারে। এতে আমার এক হাত ও দুই পা জখম হয়ে যায়। আমি সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন বাড়ি যাচ্ছি।
অর্জুন ভাদুড়ির ভাতিজা মানিক ভাদুড়ি জানান, কাকার দোকানের উত্তর পাশে আমার জুয়েলার্স দোকান। বোমের আওয়াজ শুনে দৌঁড়ে আসি। এসে দেখি কাকা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ততৎক্ষণে ডাকাতরা স্বর্ণ লুট করে নিয়ে গেছে। পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে কাকা অর্জুন।
ব্যবসায়ী আবুল বরকত জানান, অর্জুন চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ। অনেক বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা করে আসছেন। তার দোকানে কোন কর্মচারী রাখেন না, তিনি একাই দোকান চালান। বাড়ি এখানে হলেও ফেনীতে পরিবার নিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না। তার দোকানে অনেক স্বর্ণ ছিল। প্রায় কোটি টাকার উপরে মানুষের স্বর্ণ বন্ধকে রাখা ছিল।
ঘটনাস্থলের পাশের জামেয়া আরাবিয়া এমদাদুল উলুম মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম জানান, যোহরের নামাজ শেষ করে ভাত খেতে বসলে বোমের আওয়াজ শুনে মাদ্রাসার দ্বিতীয়তলার জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি পাঁচজন হেলমেট পরা, একজন হেলমেট ছাড়া লোক দুইটি মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যাচ্ছে। দোকানের সামনে এসে দেখি দোকান মালিক রক্তাক্ত অবস্থায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মু. খালেদ হোসেন জানান, ঘটনাস্থল ও আশপাশের বেশকিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছে। পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি, এক জোড়া স্যান্ডেল আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাটি অধিক গুরুত্ব সহকারে দেখছে পুলিশ। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত