চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রতি মাসে চাঁদপুর জেলা কারাগার পরিদর্শনে যাই। সেখানে গেলে দেখা যায় ৯০ ভাগ আসামি মাদকের। চলতি মাসেও কারগার পরিদর্শন করে জানতে পারলাম ৯শ জন আসামীর মধ্যে ৮ শতাধিক মাদক মামলার। এদের মধ্যে কেউ মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারী। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এটিকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মতলব দক্ষিণ উপজেলা হল রুমে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকদের অংশগ্রহনে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন পেশার সাথে জড়িত। আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে দেখবো আমার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ কোথায়। সেটি হচ্ছে আমার পরিবার ও সন্তান। অর্থাৎ আমরা যত কিছুই করিনা কেন, সবই পরিবার ও সন্তানের জন্য। আমি চাইবো না, আমার সবচাইতে বড় বিনিয়োগ নষ্ট হয়ে যাক।
ডিসি বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছি, অনেক উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের অনেক বড় বড় উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। গত দু’বছরে অতিমারি অতিবাহিত হওয়ার পরও আমাদের অবস্থা ভালো আছে। আজকের অনুষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও অপব্যবহার রোধের জন্য হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন কেন, এটি বন্ধ করে দিলে কি সমস্যা? আসলে বন্ধ করা যাবে না, কারণ মাদকদ্রব্য ভাল কাজ অর্থাৎ চিকিৎসা ও ব্যবহার হয়। যেমন-প্যাথেডিন। এটি এখন নেশারও সামগ্রী। আগে ফার্মেসীতে কাশের সিরাপের বেশ কয়েকটি ঔষধ ছিল। এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এটি কারণ হচ্ছে আসক্তি। এই আসক্তি কেন? এগুলো কেন নিয়ন্ত্রণ করা দরকার, এসব বিষয়ে বিগত ২০ বছরে অনেক আলোচনা হয়েছে গনমাধ্যম, টকশো ও প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ নামে অধিদপ্তর খোলা হয়েছে, এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিন্তু আমরা পারছি না। আমরা ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন যদি আমরা বাস্তবে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের বর্তমান যে তরুন প্রজন্ম আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষার্থী আছে, তাদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমি উপজেলা পর্যায়ে পরিদর্শনে আসলে বিদ্যালয়গুলোতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা অর্থাৎ বইয়ের সাথে সম্পর্ক খুবই কম। কয়েকমাস পরে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনে যাবো। সেখানে গিয়ে তাদেরকে বইয়ের প্রথম অধ্যায় থেকে পড়া জিজ্ঞাসা করবো, দেখবেন তারা বলতে পারছে না। তারা বিদ্যালয়ে পাঠ্য বই নিয়ে আসে না, আসে নোট বই নিয়ে। বাজারে নোট বইগুলোর কারণে, শিক্ষার্থীরা এখন মূল পড়া থেকে অনেক দূরে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মতলব দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান বি.এইচ.এম. কবির আহমেদ। কর্মশালার মূল বিষয় ভিত্তিক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: ইমদাদুল ইসলাম মিঠুন। উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেটু কুমার বড়ুয়া, উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ফেরদৌসি বেগম রুনু, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সাহিদুল ইসলাম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/এএ