তীব্র শীতে সাতক্ষীরায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি ও কোল্ড ডায়রিয়াসহ নিউমনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই অবস্থা সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, শিশু হাসপাতালসহ জেলার ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে অনন্ত ১০০০ থেকে ১২০০ রোগেী ঠান্ডাজনিত রোগে চিকিৎসা সেবাগ্রহণ করেছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীরচাপে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। সাতক্ষীরায় গত এক সপ্তাহে তাপমাত্রা নেমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আসার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, সকাল ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় কনকনে ঠান্ডার কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে প্রতিটি হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। বারান্দাতেও অতিরিক্ত বেড দিয়ে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডে ৫০ শয্যার ক্যাপাসিটি থাকলেও প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালে জনবল সংকট থাকায় অধিক রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের।
জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া নিয়ে ৭ জানুয়ারি থেকে ৪ বছরের তাওছিপকে নিয়ে ভর্তি আছেস সাতক্ষীরা বুধহাটা গ্রামের মা ফাতেমা খাতুন। তিনি বলেন, কনকনে শীতে তার ছেলের প্রথমে জ্বর ও সর্দি হয়। পরে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন অনেকটা সুস্থ।
৫ মাসের কন্যা সন্তান নিয়ে আসা তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, ৯ জানুয়ারি ভোরে তার মেয়ে ফার্জানাকে নিয়ে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে যান। রোগীর চাপে শয্যা খালি না থাকায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করান। ততিরিক্ত ঠান্ডা পড়ার কারণে তার শিশু কন্যার নিউমোনিয়া হয়েছে। বুকে কফ জমার কারণে দিনে তিনবার নেবুলাইজার দিতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শামছুর রহমান জানান, বর্তমানে ৫৫ জন শিশু ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া, নিউমনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন প্রতিদিন গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ জনের মতো রোগী। তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। গত এক সপ্তাহে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সুচিকিৎসার কারণে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এখান থেকে সুস্থ হয়ে অনেকে বাড়ি ফিরেছে। আবার অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কনকনে এই শীতে প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের ঘর থেকে বাইরে আনা যাবে না। সবসময় শরীরে গরম কাপড়সহ পা ও দুই হাতে হাত মোজা পরিয়ে রাখতে হবে তাহলে ঠান্ডজনিত সকল রোগ থেকে শিশু সুরক্ষা থাকবে।
সাতক্ষীরা ৩০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বর্তমানে ৩৭ জন শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। শিশু হাসপাতালের নার্সদের ইনচার্জ স্টাফ নার্স সেলিনা পারভীন জানান, জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকে। প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও শিশুরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সব শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। বেড সংকটে অনেক সময় ফ্লোরে বিছানা করে রোগীকে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়েছে। রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এই মুহূর্তে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ঠান্ডাজনিত রোগে ৮ থেকে ১০ জন ভর্তি হয় চিকিৎসা সেবা নিতে। সব মিলিয়ে বলা চলে গত এক সপ্তাহে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল,শিশু হাসপাতালসহ ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে এক হাজার থেকে ১২০০ রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ