গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর, জাঙ্গালিয়া, মোক্তারপুর ও জামালপুর ইউনিয়নের চারমোহনায় বিনিরাইল গ্রামে বসে মাছের মেলা। তবে মেলার বেশির ভাগ অংশই জামালপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বিনিরাইল গ্রামে। আর সে কারণেই এটাকে বিনিরাইলের মাছের মেলা বলা হয়। অনেকে আবার জামাই মেলাও বলে থাকে।
মূলত: পৌষ সংক্রান্তিতে আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে পৌঘ মাসের শেষ দিনে বসে পুরনো এই মাছের মেলাটি। আর এই মাছ মেলাকে ঘিরে ভিড় জমায় দূর-দূরান্ত থেকে মাছ কিনতে আসা আগত মেয়ে জামাই ও উৎসুক দর্শনার্থীরা। উৎসবমূখর হয়ে উঠে মেলার পরিবেশ। সারা দিনব্যাপী বড় বড় মাছের দাম নিয়ে চলে নিয়ে চলে হাক ডাক।
এটা জামাই মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলাকে ঘিরে আশে পাশের কয়েক জেলায় মানুষের সমাগমে এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে মেলায় দিনভর চলে আনন্দ-উৎসব। আর এ দিনটির জন্য পুরো বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা।
আয়োজকরা জানান, এটা মাছের মেলা হলেও, এখানে চলে এলাকার জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগীতা। বিনিরাইল এবং এর আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমস্ত জামাইরা হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণার্থী। তবে এই মেলাকে ঘিরে এলাকার শ্বশুর-জামাইদের মধ্যেও চলে নীরব প্রতিযোগীতা। আর এই প্রতিযোগীতাটি হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যেতে পারে। আবার শ্বশুররাও চান সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে জামাইকে আপ্যায়ন করতে। বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন শ্বশুর-জামাইয়ের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগীতার মাঠ।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন আসছেন। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকে এসেছেন ঐতিহ্যবাহী ২৫০ বছরের পুরনো উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। এবারের মেলায় প্রায় ২ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও সাজিয়ে বসেছে দোকানী। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও।
বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর যাবৎ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খাইরুল আলম জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। ঐতিহ্যেবাহী এই মেলায় প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার মাছ ক্রয় বিক্রয় হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম