খেজুরের গুড় অথচ নেই খেজুরের রস, আবার আখের গুড় অথচ নেই আখের রস। এ গুড়ের উপাদান, ঝোলা গুড়, দূষিত চিনির শিরা, হাইড্রোজ, রং, স্যাকারিন, ফিটকিরি ও চুন। এসব ভেজাল গুড়ে সয়লাব নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজার। এছাড়াও রাজশাহী ও নাটোর থেকে ভেজাল গুড় আনা হচ্ছে।
এদিকে নওগাঁ সদর উপজেলা শৈলগাছী, রাণীনগরের শাহাগোলা, আত্রাইয়ের সাহেবগঞ্জ, মহাদেবপুর দোহালী, পাহাড়পুর ও মথুর কৃষ্ণপুর, মান্দার উপজেলার সতিহাট ও কালিকাপুর এলাকায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সারা বছরই ভেজাল গুড় তৈরি করে আসছেন। প্রশাসন ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এসব কারখানায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ঝুঁকিপূর্ণ গুড় উৎপাদন বন্ধ করতে পারেনি।
সম্প্রতি মহাদেবপুরের মথুর কৃষ্ণপুর গ্রামের আল আমিন গুড় ঘর নামে একটি গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, দূষিত চিনি ও মিষ্টির শিরা, চুন, ফিটকিরি ও রং মিশিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। কারখানা মালিক আল আমিন মন্ডলকে সহযোগিতা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
চিনির সঙ্গে মেশানো বিভিন্ন উপকরণ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কেন তারা শুধু লাভের জন্য এভাবে গুড় তৈরি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যা মেশানো হচ্ছে তা অ-খাদ্য নয়। আপনারা বাজারে যেসব মিষ্টি খান, সেগুলোতে এসব রাসায়নিক মেশানো আছে। আবার ফলমূলেও রাসায়নিক মেশানো আছে। গুড় দেখতে যাতে সুন্দর হয়, সেজন্য বছরের পর বছর ধরে আমরা এভাবেই চিনি ও ঝোলা গুড়ের সাথে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে থাকি। এগুলোর গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানি না। ওই কারখানায় র্যাবের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালায়। এ সময় আল আমিন গুড় ঘরসহ পাঁচটি গুড় তৈরির কারখানায় রাসায়নিক মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ অভিযানে ১৫১ মণ ভেজাল গুড়, ১৮ হাজার ৬৫০ লিটার দূষিত চিনির শিরা, ২ হাজার ৫৫০ কেজি হাইড্রোজ, কেমিক্যাল রং সাড়ে চার কেজি, স্যাকারিন ৪ কেজি, ফিটকিরি ৫০০ গ্রাম ও ৫ কেজি চুন উদ্ধার করে ধ্বংস করা হয়। ভেজাল গুড় তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করা হয়। না জেনে অনেকে কিনে খাচ্ছেন এসব গুড়। তৈরি হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
নওগাঁ শহরের পৌর মাছ বাজার এলাকায় গুড়ের অন্যতম বড় মোকাম। সেখানকার গুড় ব্যবসায়ী মাছুম আলী বলেন, সত্যি কথা হলো বাজারে যেসব গুড় বিক্রি হয়, তার কোনোটাই খাঁটি নয়। খেজুর কিংবা আখের গুড় যাই হোক না কেন সব গুড়েই কম বেশি ভেজাল মেশানো থাকে। এখন আর আগের মতো আখের চাষ নাই। আবার আগের মতো খেজুর রসও পাওয়া যায় না। খেজুর রস ও আখের স্বল্পতার কারণে এবং চাহিদা বেশি থাকায় কারখানার মালিকরা অল্প একটু খেজুর রস কিংবা আখের রসের সঙ্গে চিনি, ময়দা ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক তৈরি করে গুড় তৈরি করছে। তবে আমরা চাই, দাম বেশি হোক, তবুও যেন খাঁটি গুড় তৈরি হয়। ভোক্তারা যেন প্রতারিত না হয়।
নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আলী আকন্দ বলেন, হাইড্রোজ, স্যাকারিন, চুন ও ফিটকিরি মিশিয়ে তৈরি ভেজাল গুড় খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার হতে পারে। এছাড়া লিভার ও কিডনির জটিল সমস্যা হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ভেজাল গুড় খেলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অধিক মুনাফার লোভে আবারও বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশিয়ে গুড় তৈরি করছে তারা। এ প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য সাধারণ জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই