২০ মার্চ, ২০২৩ ১৯:১০

রাজশাহীতে আবাসন প্রকল্পে ঘর পাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা

গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে তিন জেলা ও ৩২ উপজেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে আবাসন প্রকল্পে ঘর পাচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা
যে মানুষগুলো পরিবার, সমাজ ও আত্মীয়স্বজনদের কাছে থেকে ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য ছাড়া কিছুই পায় না, অপমান, বঞ্চনা যাদের নিত্যসঙ্গী। এমনকি পারিবারিক সম্পত্তির ভাগাভাগির ক্ষেত্রেও তারা বঞ্চিত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা নিগৃহীত হচ্ছেন, কেউ কেউ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। এসব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। তাদের জন্য জমি ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা যেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে এজন্য হাঁস, মুরগি, সবজি ও মাছ চাষের মতো ব্যবস্থা করা হচ্ছে। 
 
সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফর উল্লাহ জানান, রাজশাহী বিভাগের তিন জেলা ৩২ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দিবেন। আগামী ১০০ দিনের মধ্যে পুরো বিভাগকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করতে কাজ চলছে।
 
জানা গেছে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য নির্মাণ করা প্রায় ৫০০ বর্গফুটের প্রতিটি ঘরে থাকবে দুটি কক্ষ, একটি বারান্দা, একটি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর। দুর্যোগসহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী জেলার পবা উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসাবে ৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ প্রত্যেকে একটি করে বাড়ি পাচ্ছেন। এরমধ্যে আছেন উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হাড়ুপুর এলাকার রুবেল হোসেন ওরফে রবিনা, বড়গাছী ইউনিয়নের নাগশোষা গ্রামের সম্রাট ওরফে সুমী খাতুন, নওহাটা পৌরসভার পূর্বপুঠিয়াপাড়ার আসাদ আলী ওরফে সাথী খাতুন, দুয়ারী বাঁধের ধারে বসবাসকারি সাগর আলী ওরফে সাগরিকা ও কৃষ্টগঞ্জ সাঁওতালপাড়ার ধীরেন সরকার ওরফে নদী খাতুন। বাড়ি পাওয়ার কথা শুনে উচ্ছ্বসিত এসব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা। 
 
পবা উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, চলতি ধাপে ৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এছাড়া এশিয়ার সর্বকনিষ্ঠ মা কে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। পুনর্বাসিত করা হচ্ছে প্রায় ৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে। ঘর পাচ্ছে সহায় সম্বলহীন ১৮ টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার। উদ্ধারকৃত খাস জমির মধ্যে অধিকাংশই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে ছিল। 
 
হিজড়া সংগঠন-বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি ও শেখ হাসিনা ইয়্যুথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড জয়ী মোস্তফা সরকার ওরফে বিজলী জানান, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো বাড়ি থেকেই বিতাড়িত হন। পরিবারগুলো তাদের তাড়িয়ে দিতে পারলেই যেন বেঁচে যায়। সরকারিভাবে বাড়ি বা ঘর পেলে তারা অনেক উপকৃত হবেন। 
 
পবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিত সরকার জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আধা-পাকা ঘরসহ দুই শতক জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হচ্ছে। পবা উপজেলায় ৫৩৫টি ঘরের জন্য প্রায় ৫০ বিঘা খাস জমির প্রয়োজন দেখা দেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রভাবশালীদের দখলক থেকে কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে।
 
জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল জানান, আবাসন প্রকল্পে তৃতীয় লিঙ্গেও জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা বেশ কঠিন ছিল। দৃষ্টিভঙ্গি না বদলানোর কারণে অনেকে প্রথম দিকে মানতে চাননি। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় আবাসনে তাদের পুনর্বাসন করা গেছে।
 
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর