বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়ে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রা.) এর মাজার জিয়ারত ও বৈশাখী মেলা পালন করা হয়েছে। বাংলা বর্ষের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এই মেলা ও জিয়ারত হয়ে থাকে। শত শত বছর ধরে এই মেলা ও মাজার জিয়ারত হয়ে আসছে। এই জিয়ারত ও মেলাকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জটাধারী সাধু সন্নাসীদের আগমন ঘটে। তারা মহাস্থানগড় এলাকায় আস্থানা গেড়ে যিকির করেন কেউ ধ্যান করেন আবার কেউ আসর বসিয়ে মারফতী গানে মত্ত থেকেছেন।
মহাস্থান গড়ে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রা.) এর আগমন এবং তার বিজয় উপলক্ষে প্রতি বছর বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এই আয়োজন হয়ে থাকে।
জানা গেছে, বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটর দুরে ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়। এই মহাস্থান গড়ে ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছিলেন হয়রত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রা.)। কথিত আছে ১৪শ’ শতাব্দিতে পুন্ড্রনগরের হিন্দু রাজা পশুরামের সঙ্গে হযরত শাহ সুলতান বলখী (রা.) যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে হযরত শাহ সুলতার মাহমুদ বলখী (রা.) বিজয়ী হন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর মহাস্থানে মাজার স্থাপিত হয়। সেই থেকে মহাস্থান গড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার মাজার জিয়ারত করেন। মাজার জিয়ারত উপলক্ষে হাজার মানুষের সমাগম হয়। আর এই সমাগমকে ঘিরে ধীরে ধীরে বৈশাখী মেলা শুরু হয়ে যায়। এই মেলাটি বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার একদিনের জন্য হয়ে থাকে।
একদিনের জন্য হলেও এর আমেজ থাকে কয়েক সপ্তাহব্যাপী। এই মেলা ও মাজার জিয়ারতকে ঘিরে বিভিন্ন জেলা ও দেশের হাজার সাধু সন্নাসী, মুসলমান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের আগমন হয়। সারারাত জিকির, দোয়া মাহফিল, ইসলামী গানের আসর এবং সাধু সন্নাসীদের আসর বসে। কেউ কেউ সারারাত ধ্যানে মগ্ন থাকেন। দিন শেষে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মহাস্থান গড়ে অবস্থিত হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহমুদ মাহীসওয়ার (র.) এর মাজার ও এর আশপাশের এলাকায় শরিয়ত, মারিফত, তরিকত, হাকিকত, মুরশীদি, ভাওইয়া, ভাটিয়ালিসহ বিভিন্ন ধরনের গানের তালে নেচে গেয়ে রাত কাটিয়ে দেন ভক্তরা।
এই মেলাকে ঘিরে এক শ্রেণির জটাধারী সাধু সন্নাসী গাঁজা সেবনের আসর বসায়। এই গাঁজার আসর যেন বসতে না পারে সে কারণে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে কয়েক বছর ধরেই কড়াকড়ি করা হয়। তারপর থেকে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এই দিবসটিকে ঘিরে মানুষের ভিড় সামলাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেচ্ছাসেবী নিয়োগ করে মাজার কর্তৃপক্ষ।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশীদ জানান, কোনওভাবেই মেলাতে গাঁজাসহ অন্য মাদক সেবন করতে দেওয়া হয়নি। এ জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই মেলা উপলক্ষে মাজার ও মহাস্থানগড় ঘিরে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। সাধু সন্নাসী এলেও পরিবেশ শান্ত রয়েছে। এখানে মানুষের ভাতৃত্ববোধ গড়ে উঠেছে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম