দিনাজপুরের একমাত্র ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি ৩৮ বছর চালু থাকার পর প্রায় ৪ শত কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে এক সময়ের শ্রমিক কর্মচারী ও ফ্যাক্টরির শব্দে কর্মচাঞ্চল সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি এখন ভুতুরে অবস্থা বিরাজ করছে এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে।
বোচাগঞ্জের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীগণ দ্রুত সময়ে সেতাবগঞ্জ চিনিকলটির আখ মাড়াই চালু করার জোর দাবি জানিয়েছেন। কেননা, চিনিকলের শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মাসিক বেতন প্রায় দেড় কোটি টাকা এই শহরে বিভিন্নভাবে ব্যবহার হতো। চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ার প্রভাবে এলাকায় ব্যবসাও দেখা দিয়েছে মন্দা ভাব, এমনটাই বললেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই বন্ধ হওয়ায় চিনিকলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও আখ আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলি খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলিতে জন্ম নিয়েছে হাজারও আগাছা, পরিণত হয়েছে জঙ্গলে। সেই জঙ্গলে বাস করছে বিষাক্ত প্রাণী। আর এই জঙ্গলের ভিতরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ পড়ে আছে। একই অবস্থা চিনিকলের কেন ক্যারিয়ারটির। অযত্নে আর অবহেলায় যেন সব কিছুই আজ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৩৩সালে তৎকালীন জমিদার আবাদি জমি ও শ্রমিক কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের আবাসনসহ মোট ৩৮ হাজার ৬০ একর জমি দিয়ে নির্মান করেন দিনাজপুরের একমাত্র ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকল। চিনিকলের নিজস্ব জমি ও সাধারণ কৃষকের রোপণকৃত আখ দিয়ে সে সময় বছরে ৩ মাস থেকে ৪ মাস আখ মাড়াই করতো চিনিকলটি। এরপর চিনিকলটি বয়সের ভারে অনেকটাই অকেজ হয়ে পরে, আখ মাড়াইয়ের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এরপর তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এইচ এম এরশাদ চিনিকলটির পাশে আধুনিক নতুন একটি চিনিকল নির্মাণ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৭ জানুয়ারি নতুন চিনিকলের উদ্বোধন করেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ। দীর্ঘ ৩৮ বছর পর গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের ৬টি চিনিকলের সাথে প্রায় ৪ শত কোটি টাকা লোকশানের বোঝা মাথায় নিয়ে সেতাবগঞ্জ চিনিকলটির আখ মাড়াই বন্ধ করে দেয় বর্তমান সরকার।
চিনিকলের প্রায় ৭৫০ জন শ্রমিকের মধ্যে বর্তমানে শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা নিয়োজিত আছে একশত জনের মত। বাকি শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ দেশের বিভিন্ন চিনিকলে বদলী হয়ে কাজ করছেন। সেতাবগঞ্জ চিনিকল বন্ধ হওয়ায় চিনিকলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও আখ আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলি খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রাক্টর এবং ট্রাক্টরের ট্রলিতে হাজারও আগাছা জন্ম নিয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। বোঝার উপায় নেই, এই জঙ্গলের ভিতরে আছে চিনিকলটির কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
এ ব্যাপারে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হুমায়ন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, এসব ট্রাক্টর অন্য মিলের চাহিদাপত্র আসলে আমরা তা পাঠিয়ে দিব। ট্রাক্টর ও ট্রলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উন্নত কোন ব্যবস্থা নেই।
বিডি প্রতিদিন/এএ