রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে একটি পরিচিত নাম রিয়াজুল ইসলাম শুভ। নিজেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যক্তি পরিচয় দিতেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার অভিজাত মহল থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্প, প্রশাসনিক দপ্তর, এমনকি প্রতিরক্ষা খাতেও প্রভাব বিস্তার করেছেন তিনি। নামে শুভ হলেও তার প্রতারণার অশুভ চক্র থেকে রেহাই মেলেনি কারোই।
জানা গেছে, পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার জন্ম নেওয়া শুভ ছোটবেলা থেকেই প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত। ছাত্ররাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রভাবশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ওই উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ (ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া ও কাউখালী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকও ছিলেন শুভ। বর্তমানে ‘রিয়ালাইজ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয় ও সামরিক সংযোগের অপব্যবহার করে তিনি গড়ে তুলেছেন ভয়ংকর প্রতারণা চক্র এবং আত্মসাৎ করেছেন কোটি কোটি টাকা। দেশে-বিদেশে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। দুবাই ও লন্ডনে আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের নামে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও বাড়ি। ঢাকার সেগুনবাগিচা, পল্টন, ধানমন্ডি ও গুলশান এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট এবং নামিদামি গাড়ির মালিক তিনি। গত এক দশকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছে আস্থা তৈরি করেছিলেন শুভ। তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোফাইল ছিল দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা, শেখ পরিবারের সদস্য এবং সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তোলা ছবিতে ভরপুর। এই ছবি ও পোস্টের আড়ালে তিনি তৈরি করেছিলেন ‘অবিশ্বাস্য সংযোগ’-এর ইমেজ, যা দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। বিশেষত মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের বরাদ্দ নিয়েছিলেন শুভ।
অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই অসম্পূর্ণ রেখেই বিল উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদারি পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ব্যবহার করতেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে বলতেন-‘ওপরের ফোন আসবে’।
কিন্তু জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর থেকে শুভ গা ঢাকা দেন। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও (শুভ ইসলাম রিয়াজুল) বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে শুভ পরিচিত নাম। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান শেখ আবদুল হান্নানের জামাতা পরিচয় দিয়ে তিনি প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করতেন। অভিযোগ আছে, সাবেক জ্বালানি সচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে লন্ডন ও দুবাইতে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন তিনি। এসব সম্পদের কোনো বৈধ উৎসের খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও রাজনৈতিক মহলে তার দাপটের আড়ালে গড়ে উঠেছিল এক ভয়ংকর প্রতারণা সাম্রাজ্য, যেখানে সরকারি চাকরি, ঠিকাদারি ও লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার নামে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।