কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) চাকরির গ্রেড পরিবর্তন এবং বেতন বৃদ্ধির মুলা ঝুলিয়ে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেক বিভাগে আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তোলা হচ্ছে ঘুষের টাকা। কর্মীদের সুবিধা দেওয়ার নাম করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মিশনে নেমেছে একটি চক্র। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১ আগস্ট রাজধানীর মহাখালী বিএমআরসি ভবনের হলরুমে সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সব জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিটিংয়ে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার সভাপতি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. নঈম উদ্দিন এ মিটিং ডেকেছিলেন। মিটিংয়ে চাকরির প্রবিধি, প্রবিধান, গ্রেড পরিবর্তন, চাকরির শুরু থেকে ইনক্রিমেন্ট বাড়াতে প্রয়োজনীয় খরচের জন্য প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকে ২ হাজার টাকা করে মোট ১৪ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’ এ ব্যাপারে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিএইচসিপিরা প্রকল্পে থাকাকালীন ১৪তম গ্রেডে চাকরি করত। কিন্তু ট্রাস্টের আওতায় আসার পরে দুঃখজনকভাবে তাদের ১৬তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা গ্রেড পরিবর্তনের জন্য আমার কাছে আবেদন করেছে। সেটা এখনো আমার অফিসেই আছে। গ্রেড পরিবর্তনের নামে যদি কেউ চাঁদা তোলে সেটা খুবই খারাপ কাজ। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত ১২ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি অডিটোরিয়ামে প্রায় ৪০০ স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতিতে সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় কমিটি টাকা উত্তোলনের বিষয়ে আলোচনা করে। এ সময় জাহিদুল ইসলাম ও নঈম উদ্দিনের নির্দেশ মোতাবেক প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীকে ২ হাজার ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে বলে জানানো হয়। এ টাকা জমা দিতে প্রত্যেক বিভাগের আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। প্রত্যেক সিএইচসিপিকে ওই অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে বলা হয়। এর একপর্যায়ে উপস্থিত অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ঘুষের জন্য চাঁদা দিতে পারবেন না বলে আপত্তি তোলেন। পরবর্তীতে খুলনা বিভাগীয় সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. তারিকুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. খাইরুল হাসান খান গত ১৪ সেপ্টেম্বর যশোর সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখায় ‘খুলনা সিএইচসিপি’ নামে একটি হিসাব খোলেন। যার নম্বর ২৩১৫০০২০০৩৩৪০।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক আগে মিটিংয়ে কর্মীদের অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে ব্যয়ের জন্য টাকা তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু আমরা কোনো কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দিইনি। খুলনা বিভাগে একটা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে শুনেছি।’
টাকা জমা দেওয়ার বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আল-আমিন তাদের সাতক্ষীরা জেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশন-২০২১ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে গত ১৪ সেপ্টেম্বর একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বিভাগীয় মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক সিএইচসিপিকে ২ হাজার ১০০ টাকা ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক সপ্তাহের ভিতরে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
এ বিষয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েশনের বাগেরহাট জেলার সিএইচসিপি মিজানুর রহমান সারা দেশের সিএইচসিপিদের নিয়ে গঠিত সিএইচসিপি অব বাংলাদেশ নামের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘প্রবিধান ও গ্রেট পরিবর্তনের নামে টাকা কালেকশন শুরু নেতাদের। খুলনা বিভাগের নেতারা মিটিং করে এভাবে বিভাগীয় অ্যাকাউন্টে টাকা ওঠাচ্ছে প্রবিধান ও গ্রেডের কথা বলে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রবিধান ও গ্রেডের কাজ করে দিয়ে কেউ টাকা খাবে এমন সাহস বা চাকরি হারানোর বাসনা কর্মকর্তাদের আছে বলে বিশ্বাস হয় না। তবে এটা বুঝতে পারছি কর্তাদের নাম করে নেতাদের পকেট ভরছে।’
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) একটি ব্লক পোস্ট, এখানে গ্রেড পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ঘুষ দিয়ে গ্রেড পরিবর্তন করার কথা বলে চাঁদা তুললে সেটা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য কেউ করছে। সরকারের এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’