নওগাঁর আত্রাই নদীর সমসপাড়া ফেরিঘাট ও ছোট যমুনা নদীর আটগ্রাম ভুপনার ঘাটে দুটি সেতুর অভাবে নৌকাতেই ভরসা করতে হয় শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষকে। বছরের পর বছর বিভিন্ন সময়ে এই দুটি ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও আজও দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশ স্থানীয়রা। তাই সেতুগুলো নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
উপজেলার ভাঙ্গাজাঙ্গাল গ্রামের বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া আব্দুল আলিম বলেন, দেশের উন্নয়ন যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে তখন খুবই ভালো লাগে। কিন্তু যখন দেখি পারাপারের জন্য আমাদের এই ফেরিঘাটে এসে প্রতিদিন শত শত মানুষকে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে তখন নিজেদের আদিম যুগের সভ্যতার মানুষদের মতো মনে হয়। এতকিছুর উন্নয়ন হলেও জোটেনি সেতু। সমসপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, উত্তরের গণভবন থেকে সড়ক পথে কবিগুরুর একমাত্র কাচারীবাড়ি আত্রাইয়ের পরিতসরের সঙ্গে সরাসরি সহজ যোগাযোগ মাধ্যমে হচ্ছে ভাঙ্গাজাঙ্গাল হয়ে সমসপাড়া দিয়ে চলাচলের পথ। কিন্তু আত্রাই নদীর ভাঙ্গাজাঙ্গাল-সমসপাড়া ফেরিঘাটে একটি সেতুর অভাবে সেই সহজ পথ কঠিন হয়ে আছে। নদীর দক্ষিণ পাশের কয়েকটি গ্রামে থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষার্থীদের ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন খেয়াঘাটের নৌকা পাড়ি দিয়ে সমসপাড়া স্কুলে আসতে হয়। বর্ষা মৌসুমে অনেক শিক্ষার্থীকে ঘাটে এসে নৌকা পার হওয়ার সময় পড়ে গিয়ে পোশাক নষ্ট করে স্কুলে আসতে হয়।
আটগ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, প্রতিদিন ২০-২৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের নিজ উপজেলা আত্রাই, রাণীনগর ও নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে নৌকায় পার হতে হয়। এই ঘাটে অনেক সময় নৌকার যাত্রী পর্যাপ্ত না হলে নৌকা চলে না। তাই পার হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তা না হলে দাড়ি টেনে নিজেকেই নৌকা করে পার হতে হয়। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে জীবনযাপন করে আসছে উপজেলার দুই ঘাটের শতাধিক গ্রামের মানুষ। রাণীনগরের ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি সেতুর অভাবে চলাচল সহজতর না হওয়ার কারণে ঘাটে এসে পারাপারের জন্য সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থও ব্যয় করতে হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষদের। ফলে বছরের পর বছর দুটি সেতুর অভাবে জীবনমানের উন্নয়নসহ ঘাট এলাকার সার্বিক উন্নয়ন যেন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
বিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, জরুরি রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে, কৃষকদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করাসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের ঘাটে এসে নৌকায় পার হয়ে যেতে হয় সমসপাড়াতে। তাই ঘাটে এসে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর সময়। নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই দুই ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলে তা বাতিল করা হয়েছে। আবার নতুন করে প্রস্তাব উপরমহলে পাঠাবো। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই ঘাটে দুটি সেতু নির্মাণ ওই অঞ্চলের শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষের বহু বছরের প্রাণের দাবি। আমি এমপি হওয়ার পর থেকে মহান জাতীয় সংসদে দুটি ঘাটে দুটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি।
বিডি প্রতিদিন/এএ