বগুড়ার বাজারে দাম কমলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না আলু। জেলার প্রতিটি বাজারে কার্ডিনাল আলু কেজিতে ১০ টাকা কমে ৫০ টাকা আর লালপাকরি আলু ৭০ টাকা থেকে কমে ৬৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, এখনো আলুর দাম বেশ চড়া। আলুসহ অন্যান্য সবজির দাম আরো কমাতে হবে।
জানা যায়, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে অর্থাৎ ২৬ থেকে ২৭ টাকা আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশ পাওয়ার পরই বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম আলু ব্যবসায়ী, কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের সাথে বৈঠক করে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রির জন্য বলেন। বৈঠকের পর বগুড়ার বাজারে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার বাজারে কার্ডিনাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা কেজি দরে। অথচ দুইদিন আগেও এই আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজিতে। আর লাল পাকরি আলু ৭০ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজিতে। দেশীয় আলু এই দামে বিক্রি হলেও ভারতীয় আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি। শুক্রবার বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, কলোনী ও খান্দার বাজার ঘুরে দেখা যায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি না হলেও কেজি প্রতি আলুর দম কমেছে ৮ থেকে ১০ টাকা।
এদিকে বাজারে অন্যান্য সবজির দাম আগের চাইতে কমেছে। প্রতিটি সবজি কেজি প্রতি কমেছে ২০ থেকে ৩০টাকা। বগুড়ার বাজারে শীতকালীন সবজি ফুলকপি ৬০, বাঁধা কপি ৬০, সিম ১২০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৫৫টাকা, মূলা ৩০টাকা, পটল ৪০টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, করলা ৫০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচু ৬০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৬০ টাকা ও লাল শাক ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে সব ধরণের সবজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি ছিল। বাজারে নতুন করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০টাকা দরে। আর ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল দেশি ১০০টাকা ও ভারতের পেঁয়াজের দাম ছিল ৬৫ টাকা কেজি।
বাজার করতে আসা শহরের দত্তবাড়ী এলাকার শামীম হোসেন জানান, বেশ কিছু দিন ধরে আলুর বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে ভারত থেকে আলু আসার খবরে আজকেই প্রথম আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এছাড়াও বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও সবজির দাম কমতে শুরু করেছে।
রাজাবাজারের আলু ব্যবসায়ী বাবু মিয়া জানান, কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু কিনে বিক্রি করা হয়। শুক্রবার আলুর দাম কমেছে। ভারতের আলু বাজারে বেশি প্রবেশ করলে দেশীয় আলুর দাম আরও কমে যাবে।
হিলি স্থলবন্দরের পণ্য আদমানির শুল্ক কর্মকর্তরা জানান, ভারত থেকে মোট ১৭৮ মেট্রিক টন আলু দেশে প্রবেশ করেছে। ভারত থেকে আলু আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আলু বাজারে দ্রুত সরবরাহে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বগুড়ার বাজারে তিন টন ভারতীয় স্টিক জাতের আলু ঢুকেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজাবাজারে এসব আলু প্রবেশ করে। যা শুক্রবার সকাল থেকে বাজারে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বগুড়ায় প্রতিদিন ১শ বস্তা বা ৬ হাজার কেজি আলু সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করবে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন এর আয়োজনে আলুর বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে জেলার কোল্ড স্টোরেজ মালিক সমিতির সাথে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলুর চড়া বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আলুর চাহিদা, যোগান ও দাম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সরকার আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ ও খুচরা পর্যায়ে বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু যে ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করবে না তাদের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে প্রতিটি জেলায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বগুড়ায় বাজার এবং কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। সেই সাথে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে আলু মজুদ থাকা সত্তে¡ও যদি কোন মালিকপক্ষ আলু না দেন তাহলে সেগুলো বের করে ভোক্তা পর্যায়ে সরকারি মূল্যে বিক্রি করা হবে। সরকারি নির্দেশনা না মানলে অভিযান চালিয়ে কোল্ড স্টোরেজ সিলগালা করা হবে। আলুর বাজারে কোন ভাবেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল