৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৬:৫০

ফুলছড়ি পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

ফুলছড়ি পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ

৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার ফুলছড়ি পাক হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে উপজেলা সদরকে হানাদার মুক্ত করে। এদিন ফুলছড়িকে মুক্ত করতে গিয়ে ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২ বেসামরিক ব্যক্তি শাহাদত বরণ করেছিলেন।

৭১’ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী বাংলায় “পোড়ামাটি নীতি” বাস্তবায়নের জন্য জ্বালাও-পোড়াওসহ ধ্বংসযজ্ঞের চরম সীমায় পৌঁছায়। তখন ফুলছড়ির মাটি ও মানুষকে রক্ষার জন্য ১১নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিবাহিনীর একটি বিশাল দল ফুলছড়ি থানা সদরের অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব তীর মুক্তাঞ্চল গলনার চরে অবস্থান নেয়।

সেক্টর কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদকের নেতৃত্বে ফুলছড়ি সেনাশিবির আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯৭১ সালের ৩ডিসেম্বর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা কমান্ডার সামছুল আলম, কমান্ডার নাজিম উদ্দিন, আ.জলিল তোতা, এনামুল হকের পরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধারা ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে ফুলছড়ি থানা সদরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। ৪ ডিসেম্বরে ভোরে গেরিলা কমান্ডার সামছুল আলমের দলটি সর্বপ্রথম ফুলছড়ি থানা (পুলিশ স্টেশন) আক্রমণ করে। উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা ও ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হলে অপর ৩টি দলের মুক্তিযোদ্ধাগণ একসাথে চারিদিক থেকে গোলা বর্ষণের মাধ্যমে পাক সেনাশিবিরের দিকে এগোতে থাকে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফুলছড়ি থানা পুলিশের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা থানার অস্ত্রাগারের সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এদিকে চর্তুমুখী আক্রমণে পরিণাম আঁচ করতে পেরে পাক সেনারা শিবির ত্যাগ করে দক্ষিণে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের আড়ালে অবস্থান নেয়। শিবির ত্যাগ করার সময় বাউশি গ্রামের মফেল আকন্দের পুত্র মোজাম্মেল আকন্দ এক পাকসেনার পিছু ধাওয়া করলে ওই পাকসেনা মোজাম্মেলকে গুলি করে হত্যা করে। পাকসেনারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটে এবং গোবিন্দি গ্রামের খোলা প্রান্তর দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে বোনারপাড়ার দিকে দৌঁড়ে পালাতে থাকে।

পাকসেনাদের এই পরিণতি দেখে গ্রামবাসীরাও পাকসেনাদের ধাওয়া করে। এ সময় গোবিন্দি গ্রামের সংস্কৃতি কর্মী মফিজল হক এক পাকসেনাকে জাপটে ধরলে পাকসেনারা বেয়নেটের খোঁচায় মফিজলকে হত্যা করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ যুদ্ধাবস্থা চলাকালীন এক পর্যায়ে মিত্রবাহিনীর বোমারু বিমান বহর পাখিমারাস্থ তিস্তামুখঘাটে উপর্যুপরি বোমা বর্ষণ করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বোমা বর্ষণের ফলে তিস্তামুখঘাটের ভাসমান সেনাশিবিরের সদস্যরা প্রাণভয়ে তিস্তামুখঘাট ত্যাগ করে বিচ্ছিন্নভাবে যত্রতত্র পালাতে থাকে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসে। এ সময় মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পাকসেনাদের একটি দল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়ে উত্তর দিকে আসার সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এনামুলের দলের মুখোমুখি হলে উভয় দলের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

দিনব্যাপী লোমহর্ষক এ যুদ্ধে ২৭ পাকসেনা নিহত হয়। অন্যদিকে শহীদ হন ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন আফজাল হোসেন, কবেজ আলী, যাহেদুর রহমান বাদল, ওসমান গণী এবং আব্দুল সোবহান। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পরাস্ত হয়ে ভোরের আগেই হানাদার বাহিনী তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফুলছড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। হানাদারমুক্ত হয় গাইবান্ধার ফুলছড়ি।

১১নং সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌতম চন্দ্র মোদক জানান, শহীদদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী সাঘাটা উপজেলার সেগুনা ইউনিয়নের খামার ধনারুহা গ্রামে এনে কবরস্থ করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ৫ শহীদের সম্মানার্থে ইউনিয়নটির নাম পরিবর্তন করে মুক্তিনগর রাখা হয়।

বর্তমান সরকারের আমলে শহীদদের কবরস্থানগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের স্বজনদের সম্মান ও মর্যাদা জানাতে সাঘাটার মুক্তিনগরে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচি। সর্বস্তরের মানুষ এই স্মৃতিস্মম্ভে এসে ফুল দিয়ে শহীদ ও তাদের স্বজনদের সম্মান জানান।

 


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর