বাহারি রঙের বিদেশি রঙিন মাছের চাষাবাদে মাসে বাড়তি আয় করছেন নীলফামারী সদরের রামগঞ্জ বাজার এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা আবু রায়হান (২৮)। শখের বশে শুরু করলেও চার বছরেই তরুণ এ উদ্যোক্তা পেয়েছেন সাফল্য। শুরুতে বাড়ির উঠানে ৫০০ টাকায় ১০ পিস মিক্সগাপ্পি মাছ কিনেন। ছোট্ট পরিসরে প্রজেক্ট শুরু করলেও বর্তমানে ২১টি পাকা চৌবাচ্চা পুকুরে করছেন এ চাষাবাদ।
শখের বসে মাছ চাষ করে তিনি এখন একজন সফল রঙিন মাছ চাষি। শখের বশে শুরু করলেও চার বছরেই তরুণ এ উদ্যোক্তা পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য।
জানা যায়, ২০২০ সালের শুরুতে করোনা মহামারির সময়ে নীলফামারী শহরের একটি অ্যাকোয়ারিয়াম ফিশের দোকান থেকে শখের বশে ৫০০ টাকা দিয়ে ১০ পিস রঙিন মাছ কিনে আনেন। তখন মাছের নামও জানতেন না তিনি। পরে জানতে পারেন, সেগুলো মিক্সগাপ্পি প্রজাতির ছিল। গ্রামের বাড়িতে বালতিতে রেখে দেন তিনি। ১৫ দিন পর পানি পরিবর্তন করার সময় কয়েকটি মাছের পেটে ডিম দেখতে পান। পরে এগুলো ডিম থেকে পোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে । এরপর তিনি আস্তে আস্তে চৌবাচ্চা তৈরি করে বাড়াতে থাকেন রঙিন মাছ চাষ। কিছুদিন পরপরই মাছগুলো বাচ্চা দিতো। এভাবে ধীরে ধীরে আমার মাছ বাড়তে শুরু করে। এখন তার খামারে ৩০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
মাছ চাষী আবু রায়হান বলেন, ‘আমার এমন কিছু করা ইচ্ছা ছিল যেখানে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আমি দেখলাম, রঙিন মাছ চাষ আমাকে আনন্দ ও অর্থ দুটোই দিচ্ছে। ব্যবসার পাশাপাশি এটা করতে আমার তেমন কষ্ট হচ্ছে না। তাই বৃহৎ পরিসরে শুরু করার জন্য চেষ্টা করি। একাজে পরিবারের সবাই আমাকে সহায়তা করে। বলতে গেলে অনেকটা খেলার ছলেই এই ফার্ম চলছে।’
বতমার্নে প্রজেক্টে ২ লাখ টাকার সেটআপ আছে জানিয়ে আবু রায়হান বলেন,আমার খামারে বর্তমানে মিক্স গাপ্পি, শর্টটেইল, রেড টেইল, প্লাটিনাম ডাম্বু, ইয়ার অ্যালবাইনো কই, কই টক্সিডো, ব্লু হেড সামু রাই, রেড মস্কো, স্নাক স্কিন গাপ্পি, কোবরা, মিক্স গাপ্পি, সর্ট টেইল, ব্যাক বেলুন মলি, হোয়াইট বেলুন মলি, জেবরা, গ্লো টেট্রা, মুন টেইল মলি, কই কার্প, কমেট কাপ এবং মিকি মাউস প্লাটি আছে। এখানে আরও ইনভেস্ট করার পরিকল্পনা আছে।
আমার নিজস্ব একটি ফেসবুকে পেজ "রঙিন মাছের খামার নীলফামারী" নামে রয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করে অনেকে আমার এখানে আসেন। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা রঙিন মাছ কিনতে আসেন। পাশাপাশি নীলফামারী ও সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীগণ পাইকারি এখন থেকে নিয়ে যায়। আকার ভেদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ১০ টাকা থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সারাদেশে অক্সিজেন ব্যাগে এসব রঙিন মাছ পরিবহনে যাচ্ছে।
বর্তমানে তার সংগ্রহে ৩০ প্রজাতির ২৫ হাজার পিস রঙিন মাছ রয়েছে। এসব মাছের বাজারমূল্য ৪-৫ লাখ টাকা।
তবে এই মাছের খামারে মৎস্য কর্মকর্তাদের তেমন সহযোগিতা পাননি তিনি। বিভিন্ন সময়ে মাছের সাধারণত পাখনা ও ফুলকা পচা রোগ হয় আর উঁকুনের আঘাতে ক্ষত তৈরি হয়। সেগুলো নিজ অভিজ্ঞতায় পরিমাণমতো লবণ, পটাশ, ফিটকিরি আর চুন ব্যবহার করে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তিনি। রায়হান সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও পরিধি বাড়াতে চান তিনি।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সাইদ বলেন, পুরোপুরি আমদানি নির্ভর এ খাতের অর্ধেকের বেশি চাহিদা পূরণ করছেন রায়হানের মতো তরুণরা। বিদেশেও এর বেশ চাহিদা রয়েছে। মাছ চাষে আগ্রহ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছেও বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/এএম