বগুড়া থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার যাত্রীবাহী বাস সংকটের সঙ্গে মহাসড়কে যানজটে পড়ে ভোগান্তিতে পড়ছে কর্মজীবীরা। এতে যানজটে পড়ে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টায় ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে। অপরদিকে অতিমাত্রার গরম, সড়কে পানির অভাব, দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে থেকে পা ফুলে যাওয়া, কোমড় ব্যথাসহ নানা সমস্যায় পড়ে কাহিল হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা এসব দুর্ভোগে পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কর্মজীবী মানুষগুলো ট্রাকে, বাসে, ট্রেনের ছাদে ভোগান্তি নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন কর্মে।
বগুড়ার ঢাকাগামী বাস কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য আগাম টিকিট বিক্রি করেন বগুড়ার বাস মালিকরা। যাত্রীদের চাপ থাকে বলে এই আগাম টিকিট বিক্রি করে থাকেন কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। ৫৫০ টাকা নন এসি, আর এসি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে টিকিট বিক্রি করা হয়। ঈদ করতে আসা উত্তরের মানুষগুলো ঈদের আগেই দীর্ঘ ১২ ঘণ্টায় বগুড়ায় পৌঁছেছেন অধিকাংশ যাত্রী। অথচ বগুড়া থেকে ঢাকায় বাসে করে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৪ ঘণ্টা। সেই ৪ ঘণ্টার পথ ঈদের আগে ও পরে পাড়ি দিতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। আবার কোনো কোনো সময় লাগছে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। শুধু যমুনা সেতুতেই পাড় হতে সময় লাগছে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা।
যমুনা সেতুর উভয় পাশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার করে যানজট লেগে থাকছে। যমুনা সেতু পাড় হওয়ার পর গাজীপুর, টাঙ্গাইল, বাইপাইল, চন্দা, সাভার এলাকায় উত্তরের বাসগুলোকে দীর্ঘ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ঈদুল আজহার ছুটির শেষ দিনে কর্মস্থলে ফিরতে থাকা বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ শনিবার (১৪ জুন) ভোর থেকেই সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মোড়ে (ঢাকা রোড), যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক এবং টাঙ্গাইল অংশের যমুনা সেতুর এলেঙ্গা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট এর কবলে পড়ছে।
বাস চালক ও যাত্রীরা বলছেন, যমুনা সেতুর উভয় পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কিছু ছোটবড় যানবাহন ও বিভিন্ন রুটের বাস, ট্রাক, প্রাইভেট একই সঙ্গে ঢাকামুখি হওয়ার কারণে এই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে প্রচন্ড গরমে হাসফাস হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। গরমের কারণে সঙ্গে নেওয়া পানিও ফুরিয়ে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
শনিবার দুপুরে বগুড়া শহরের বনানী মোড়ে ঢাকা ফেরত বাস চালক মো. মাসুদ রানা জানান, তিনি শুক্রবার ১৩ জুন) রাত ১২ টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রওনা হয়ে শনিবার সকাল ১১ টায় বগুড়ার বনানী মোড়ে পৌঁছান। আবার বগুড়া থেকে যে বাসগুলো ঢাকামুখি তাদেরও একই অবস্থা। যানজটের কারণে সময়মত বাসগুলো কাউন্টারে ভিড়তে পারছে না। আর তাতে মনে হচ্ছে বাস সংকট। বাস সংকট নেই। মহাসড়কের যমুনা সেতুর উভয় পাশে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট। প্রাইভেট, মিনিট্রাক, বাস ও ট্রাকগুলো একই সময়ই বের হওয়ার কারণে যানজট হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে যমুনা সেতু, গাজীপুর, এলেঙ্গা ও সাভার এলাকায় যানজট দেখা যাচ্ছে।
বাসযাত্রী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়ার বিভিন্ন বাস কাউন্টারে দুই দিন ঘুরে একটি টিকিট পেয়েছেন। শুক্রবার বিকাল ৩টার বাস ছাড়ে ৫টায়। এরপর ভোরের দিকে ঢাকার কল্যাণপুরে নামেন তিনি। তিনি বলেন, অনেক পরিবার বাসের টিকিট না পেয়ে মিনি ট্রাকে করে খোলা পরিবেশে রওনা হন। রোদে পুড়ে ভ্যাপসা গরমে কর্মে ফিরেছেন। সঙ্গে নেওয়া পানি ফুরিয়ে গেলে পানির সংকটও দেখা দেয়। বাসের মধ্যে বসে থাকাও গরমে দুর্ভোগ ও নানা কষ্ট পোহাতে হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও যমুনা সেতু ও তার আশপাশে গাড়ি দুর্ঘটনা ও বিকল গাড়ির কারণে এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
যমুনা সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ আহমেদ জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে যমুনা সেতুর উপর পিকআপ ও ট্রাকের দুর্ঘটনা ঘটে। এতে পারাপার হতে না পেরে যানজটের সৃষ্টি হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই অনেকগুলো বাস ও বাসের যাত্রীরা আটকা পড়ে। রাতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের ধীরগতি হয়। খবর পেয়েই উদ্ধার কাজ করার পর কিছুটা গতি বেড়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোঃ শহিদ উল্লাহ জানান, বগুড়াসহ উত্তরের মানুষগুলো বাসে করে দুর্ভোগ ছাড়াই যেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় সকল রুটেই এখন যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে সড়কে কিছু সময়ের জন্য যানজট সৃষ্টি হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল