পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে আবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়ন। নতুন করে জাজিরা প্রান্তে আরও ১০০ মিটার রক্ষা বাঁধ ধসে পড়েছে। এতে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও পড়েছে হুমকির মুখে।
গত বুধবার ও আজ শুক্রবার মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারসংলগ্ন এলাকায় এই ভাঙনের সূত্রপাত হয়। এতে আরও ১৫টি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত ১৭ দিনে মোট ৬৫০ মিটার রক্ষা বাঁধ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৩৩টি দোকান ও ১৫টি বসতবাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে আরও ৫০টি বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজারের শত শত মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দোকান মালিকদের চোখেমুখে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা।
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, "বাঁধ থাকায় এত দিন আমরা নির্ভয়ে ব্যবসা করতে পেরেছি। এখন প্রতিটি মুহূর্ত দুশ্চিন্তায় কাটছে। ইতোমধ্যে ১৫টি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আজ আরও সরানো হবে।"
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে রক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। চলতি বছরের ৭ জুন ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার এবং সর্বশেষ শুক্রবার আরও ১৫০ মিটার ধসে পড়ে। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হলেও পানির প্রবল স্রোতের কারণে তা খুব একটা কাজে আসছে না।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, "পুরোনো বাঁধটি অনেক দিন ধরে ক্ষয়ে যাচ্ছিল। নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় আমরা ঘরবাড়ি ও দোকান সরিয়ে নেওয়ার তালিকা তৈরি করছি।"
এদিকে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে সেনানিবাস, সার্ভিস এরিয়া-২ ও দক্ষিণ থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো রয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ ওই এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করলেও সেটিও ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে।
পাউবো শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, "পানির চাপ বাড়ায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে, পাশাপাশি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।"
বিডি প্রতিদিন/আশিক