মর্গ্যান-রুটদের ব্যাটিং তান্ডবের পর যেমনটা প্রত্যাশিত ছিল ঠিক তেমনটাই ঘটল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ইংল্যান্ডের চাপিয়ে দেওয়া রানের পাহাড়ে চাপা পড়ল আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৯৮ রানের লক্ষ্যমাত্রার সামনে নির্ধারিত ৫০ ওভারে মাত্র ২৪৭ রান তুলতে সমর্থ হলেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। যার ফলে ১৫০ রানে জিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে টপকে লিগ টেবিলে শীর্ষস্থান দখল করল ইংল্যান্ড।
১৯৭৫ পর বিশ্বকাপে এটাই ইংল্যান্ডের সর্বাধিক রানের ব্যবধানে জয়। এর আগে বিশ্বকাপের প্রথম আসরে ভারতকে ২০২ রানে পরাস্ত করেছিল ইংল্যান্ড, যা এখনও বিশ্বক্রিকেটের মেগা ইভেন্টে ইংলিশদের সর্বাধিক ব্যবধানে জয়। ম্যানচেস্টারে এদিন ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং তান্ডবের পরই ইংল্যান্ডের জয় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। টস জিতে ওল্ড ট্র্যফোর্ডে প্রথমে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। আর প্রথমে ব্যাটিং নিয়ে বিশ্বকাপে ছক্কার রেকর্ড গড়ে আফগানদের সামনে ৩৯৮ রানের টার্গেট রাখে ইংল্যান্ড।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৫টি ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। দলীয় রেকর্ডের পাশপাশি মঙ্গলবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবেও রেকর্ড ছক্কা হাঁকান ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন ইয়ন মর্গ্যান। অধিনায়কের বিধ্বংসী ইনিংসে ভর করে ম্যাচে আফগানদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় থ্রি লায়ন্সরা। চোটের জন্য এদিন মাঠে নামায় অনিশ্চিত ছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। কিন্তু মাঠে নেমে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিলেন আফগান বোলারদের৷
রশিদ খান, জারদানদের পিটিয়ে ছক্কার রেকর্ড হাঁকান মর্গ্যান। বিশ্বকাপেতো বটেই, ওয়ানডে ক্যারিয়ারেও এক ইনিংসে সর্বাধিক ১৭টি ছক্কা মেরে রেকর্ড গড়েন ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন। এর আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক ১৬টি ছয় মারার রেকর্ড ছিল রোহিত শর্মা, এবি ডি’ভিলিয়ার্স ও ক্রিস গেইলের। কিন্তু এদিন সবাইকে টপকে বিশ্বরেকর্ড গড়েন মর্গ্যান।
আফগান বোলারদের বিরুদ্ধে এদিন অত্যন্ত নির্মম ছিলেন ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন। ৭১ বলে ১৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন মর্গ্যান। ইনিংসে ১৭টি ছক্কা ও চারটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। স্ট্রাইক-রেট ২০৮.৪৫। পাশাপাশি এদিন ৫৭ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন মর্গ্যান। ছক্কার ব্যক্তিগত রেকর্ডের পাশপাশি ইংল্যান্ড এদিন ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক ২৫টি ছয় মারার রেকর্ড গড়ে। এর আগে তাদেরই ছিল এক ইনিংসে ২৪টি ছক্কার রেকর্ড। মর্গ্যানের ১৭টি ছক্কা ছাড়াও মইন আলি ৪টি, জনি বেয়ারস্টো ৩টি এবং জো রুট একটি ছক্কা হাঁকান।
মর্গ্যান ছাড়াও ইংল্যান্ড ওপেনার বেয়ারস্টো ৯০ এবং রুট ৮৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। এছাড়া শেষ দিকে ৯ বলে চার ছক্কাসহ ৩১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন মঈন আলি। শেষ ১০ ওভারে ১৪২ রান তোলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ৩৯৭ রান তোলে ইংল্যান্ড।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার নুর আলি জাদরানের উইকেট হারায় আফগানিস্তান। শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। এরপর আফগান ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নাইব, রহমত, হাসমাতুল্লাহরা। তবে ইংল্যান্ডের পাহাড়প্রমাণ রানের সামনে তাদের অবদান একেবারেই যথেষ্ট ছিল না।
আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন হাসমাতুল্লাহ শাহিদি। ৪৬ ও ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন রহমত সিং ও সাবেক অধিনায়ক আসঘার আফগান। ৩৭ রান করেন অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার মিলিয়ে চার ব্যাটসম্যানের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পর সেই অর্থে আর দাগ কাটতে পারেননি লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত ইংরেজ বোলারদের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৪৭ রান তুলতে সমর্থ হয় এশিয়ার দেশটি।
১৫০ রানে ম্যাচ জিতে লিগ টেবিলে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে শীর্ষস্থান দখল করল ইংল্যান্ড। ৫ ম্যাচে মর্গ্যান বাহিনীর পয়েন্ট সংখ্যা ৮। সমসংখ্যক ম্যাচে সমান পয়েন্ট থাকলেও নেট রান রেটে লিগ টেবিলে দুই নম্বরে অস্ট্রেলিয়া।
বিডি-প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ