ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে জানমাল রক্ষায় ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগেই উপকূলীয় জনগনকে (যাদের নাজুক এবং কাঁচা ঘরবাড়ি) দ্রুত সময়ে মধ্যে নিরাপদ আশ্রয় তথা সরকারী সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় বরিশাল সার্কিট হাউজে বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া সভায় দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থারগুলোর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।
ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থা এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের প্রস্তুতির বিষয়ে সভায় অবহিত করেন।
বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকারিয়া, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এহসানউল্লাহ, বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন সহ সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় দক্ষিন-পশ্চিম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টি রাত ১২টা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে স্থানীয়ভাবে তারা ধারণা করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি সভায় জানান, ঘূর্ণিঝড়ে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য বিভাগের সব জেলায় তাদের একাধিক টিম প্রস্তুত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সকল ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ কমকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, শুক্রবার রাতে দক্ষিনের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রীবাহি নৌযান ছেড়ে গেলেও ওই রাতে ঢাকা থেকে দক্ষিনের কোন রুটের উদ্দেশ্যে কোন যাত্রীবাহি নৌযান ছেড়ে আসেনি। শুক্রবার রাতে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো আজ শনিবার ভোর ৫টার মধ্যে সদরঘাটে নিরাপদে পৌঁছেছে। আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রতিনিধি জানান, দুর্গোগকালীন সময়ে বিপদগ্রস্থ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার জন্য বিভাগের সবগুলো সাইক্লোন শেল্টার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। সবগুলো সাইক্লোন সেল্টারে সুপেয় পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি।
দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বিপদগ্রস্থ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে বিভাগের ৬ জেলায় ৩১৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি।
ঝড়ে গাছপালা উপড়ে কিংবা ভেঙ্গে পড়ে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃস্টি হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক-মহাসড়ক থেকে গাছপালা সরিয়ে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সড়ক বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী।
দুর্যোগকালীন সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়াসহ ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হলে দ্রুত সময়ের মধ্রে ক্ষতিগ্রস্থ লাইন সংস্কার করে বিদ্যুত ব্যবস্থা সচল রাখতে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুত বিভাগের প্রতিনিধি।
সভায় বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এহসানউল্লাহ বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্যোগকালীন সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে কিংবা সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়া মানুষের বাড়িঘর কিংবা সম্পদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। জনগনকে সেবা দেওয়ার জন্য রেঞ্জ পুলিশ একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
কোস্টগার্ড প্রতিনিধি সভায় বলেন, উপকূলীয় এলাকা তথা নদী তীরবর্তী কিংবা বিচ্ছিন্ন চরা লের মানুষকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে কোস্টগার্ডের একাধিক দল প্রস্তুত রয়েছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, জেলায় ২৩২টি সাইক্লোন শেল্টার ছাড়াও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সকল সরকারী অবকাঠামো দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সব সাইক্লোন শেল্টারে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার এবং ওষুধ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে খবরা খবর জানতে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারনা চালানো হয়েছে।
সভায় মেট্রোপপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, সরকারের অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করে দুর্যোগ আঘাত হানার আগেই মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যেতে কাজ করছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর পাশাপাশি যারা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেন তাদের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেন পুলিশ কমিশনার।
সভার সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, দুর্যোগে জনগনের জানমালের ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থার সকল ধরণের ছুটি আগেই বাতিল করে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে কিংবা তাদের প্রস্তুতির বিষয়ে সব শেষ অবস্থান জানতে বিভাগীয় সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। সভায় সকল বিভাগে প্রস্তুতিতে তারা সন্তুষ্ট। বিভাগের ৬ জেলায় ২ হাজার ১১৪টি সাইক্লোন শেল্টারে ১৭ লাখ ৮৩ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার ও ওষুধ সামগ্রী মজুদ আছে বলে বিভাগীয় কমিশনার জানান।
এদিকে, দুর্যোগ মোকাবেলায় আজ শনিবার দুপুরে জরুরী সভা করেছে সিটি করপোরেশন। সভায় সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ঝড়ের সময় জানমালের ক্ষতি এড়াতে বড় বড় বা উচু ভবনের ছাদ থেকে টিন, কাঠ, বাঁশ বা অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য সিটি করপোরেশনের সকল বিভাগের ছুটি বাতিল করে সকলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সভায় জানান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে শনিবার বাদ আসর সকল মসজিদে এবং বিকেলে মন্দিরে ও গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা করার জন্য সংশ্লিস্টদের প্রতি সিটি মেয়র আহ্বান জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত বাবলু।
বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ