শুক্রবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিটলুর বুদ্ধি

হালিমা নদী

বিটলুর বুদ্ধি

গ্রামের পাশেই জঙ্গল। জঙ্গলের শেষ প্রান্তে বড় একটা বটগাছ। সেই বটগাছে বাস করত একদল বানর। সারাদিন তারা বনে-জঙ্গলে ঘুরেঘুরে খাবার সংগ্রহ করত এবং দিনশেষে সবাই বটগাছে ফিরে আসত। এভাবে তাদের দিন-কাল বেশ আনন্দেই কাটছিল।

হঠাৎ একদিন বানর-রাজের লোকালয় দেখতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু তিনি একজন রাজা। দুম করে অচেনা একটা জায়গায় যাওয়া তার সাজে না। তাই তিনি রাজসভা ডাকলেন। নিজের ইচ্ছের কথা জানালেন সবাইকে। সবাই যে যার মতামত প্রকাশ করতে লাগল। সবার সাথে আলোচনা করে বানর-রাজ একটা সিদ্ধান্তে এলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকজনকে লোকালয়ে পাঠানো হলো খোঁজ-খবর নিতে। কয়েকদিন পর তারা ফিরে এলো এবং লোকালয় সম্পর্কে যে তথ্যগুলো দিল তা শুনে সবার কাছে জঙ্গলের চেয়ে লোকালয়ে বাস করা সহজতর মনে হলো। তারা তলপিতলপা গুটিয়ে লোকালয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

পরদিন সবাই গ্রামের পথে রওনা হলো। তারা  প্রথমে গ্রামের কলাবাগানে ঢুকে কলা শেষ করল। তারপর একেএকে পেঁপে, লিচু। ফলবাগানের ফল শেষ করে তারা এবার মানুষের বাড়িবাড়ি ঢুকে পড়ল। কেউ ঘরের খাবারে থাবা বসায় আবার কেউ বা থাবা বসায় খোলা দোকানের রুটির গামলায় ।

তাদের এমন অত্যাচারে গ্রামের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তারা বানরের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে একটা মিটিং ডাকে। মিটিং এ যথারীতি সবাই উপস্থিত হলে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন কথা বললেও কেউই বানর তাড়ানোর সঠিক উপায় খুঁজে বের করতে পারছে না।

তাদের মধ্যে একজন বলল, খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে বানরগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। এ ছাড়া আমি আর কোনো উপায় দেখছি না।

কথাটা শুনে যারা এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল তারাও মাথা নেড়ে সায় দিল। কিন্তু মোড়ল সাহেব এতে সায় দিতে পারছেন না। তিনি এতগুলো প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হতে চান না। তিনি ছোটবেলায় বইতে পড়েছেন, জীব হত্যা মহাপাপ। কিন্তু, এ ছাড়া বানর তাড়ানোর অন্য কোনো উপায় কারো জানা নেই। কী করা যায় এখন? মোড়ল সাহেব ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন।

এমন সময় দশ-বারো বছর বয়সী বিটলু বলে উঠল, মোড়ল সাহেব আপনি অনুমতি দিলে আমি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি।

এতগুলো লোকজন মিলে যে সমস্যাটা সমাধান করতে পারছে না এই ছোট্ট ছেলেটা তা সমাধান করে ফেলবে! গ্রামের সবাই বিটলুর দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকায়।

বিটলু আবারো বলে, চিন্তা নেই। আমার এ পদ্ধতিতে একটা বানরও মারা পড়বে না।

মোড়ল সাহেব ভাবেন, যেখানে কেউ কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না, সেখানে এই ছেলেটি চেষ্টা করে দেখতে চাইছে। তাকে একটা সুযোগ দেয়া উচিৎ। অনেক ভেবে-চিন্তে তিনি বিটলুকে একটা সুযোগ দেন।

পরদিন বিটলু ফাঁদ পেতে একটা বানর ধরল। তারপর তার পায়ে রশি লাগিয়ে গ্রামের প্রান্তরে উঁচু একটা বাঁশের খুঁটির সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিল। বানরটা ভয় পেয়ে প্রাণপণে চেঁচামেচি শুরু করল। তার এমন আর্তনাদে বাকী বানরেরা ছুটে পালালো।

বিটলু তার বুদ্ধি দিয়ে গ্রামের সবার প্রশংসা কুড়াল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর