গরমের সময়ে প্রায় সবারই নাজেহাল অবস্থা। স্বস্তিতে থাকতে বাসায় ও অফিসে দিনের একটা বড় অংশ ঠাণ্ডা হাওয়ার মধ্যেই কাটছে। গরমকালে দিনের সিংহভাগ সময় এসির মধ্যে কাটালে অজান্তেই ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আগে থেকেই সাবধান থাকতে পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা।
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে। গরমের মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায় বলেই আমাদের ঘাম শুরু হয়। আর বেশি ঘাম ও কষ্ট থেকে আমাদের স্বস্তি দেয় এসি। গরমকালে দীর্ঘ সময় এসিতে থাকলে তাই শীতকালের মতোই কারো কারো ত্বক শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশের কোনো জায়গায় তাপমাত্রা কম থাকলে বা কোনো রুক্ষ জায়গায় বেশিক্ষণ এসিতে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। যার জন্য বিদেশে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে বলা হয়। এর ফলে ঘরের মধ্যে আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক থাকে।
তারা আরও জানান, যদিও আমাদের দেশ নদীমাতৃক এবং গরমকালে বাতাসে আর্দ্রতাও অনেক বেশি। এর ফলে এসিতে থাকলে খুব একটা সমস্যা দেখা দেয় না। তবে আমাদের দেশেও বেশিক্ষণ এসিতে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ত্বক শুষ্ক রাখা ঠিক নয়।
সাধারণত যাদের বয়স ৫০-এর ওপরে, তাদের ক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময় এসির মধ্যে থাকলে অল্পবয়সিদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা যেতে পারে। হয়তো কেউ দীর্ঘ দিন বাড়িতে এসিতে বসে অফিসের কাজ করছেন। তাদের শুষ্ক ত্বকের সমস্যা হতে পারে।
ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকলে কাদের বাড়তি সাবধানতা বজায় রাখা উচিত- এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাদের সুগারের মাত্রা বেশি, তাদের শুষ্ক ত্বকের সমস্যা হতে পারে। আবার অনেক সময় কোনো বিশেষ ওষুধ থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাদের আরো বেশি করে এসি থেকে সাবধান হওয়া উচিত। তাই গরমকালে দীর্ঘ সময় এসিতে থাকলে এই সমস্যাগুলি আরো বেড়ে যেতে পারে।
এর থেকে বাঁচতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। গোসলের আগে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল এবং গোসলের জন্য কম ক্ষার যুক্ত কোনো সাবান ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
গরমকালে দীর্ঘ সময় এসিতে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আবার বেশি ঘাম হলে তখন বিভিন্ন ফাংগাল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা গরমকালে এসির ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিলেন। এসি না চালিয়ে গরমে ঘামলে ফাংগাল ইনফেকশন অর্থাৎ দাদ হতে পারে। আবার এসিতে বেশিক্ষণ থাকলে রুক্ষ ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বকের রুক্ষতা তখন চুলকানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসি এবং সাধারণ তাপমাত্রা- দুইয়ের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে হবে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ সময় এসিতে সময় কাটালে মূলত শুষ্ক ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। যাদের ত্বক একটু স্পর্শকাতর (অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস), তাদের ক্ষেত্রে ত্বক শুষ্ক হলেই তখন ভাঁজে ভাঁজে চুলকানি শুরু হতে পারে। এসিতে থাকলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি, যাতে রুক্ষ ত্বকের সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
গরমকালে এসি ব্যবহার করলে বাতানুকূল যন্ত্রটির ফিল্টার যেন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এসির ফিল্টারে জীবাণু জমা হয়ে থাকে। পরিষ্কার না করলে ঘরের মধ্যে সেগুলো সংবাহিত হয়ে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তখন আরো বেশি চুলকানি হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, দৈনন্দিন জীবনে গরমের হাত থেকে স্বস্তি পেতে এসি থেকে সম্পূর্ণ ভাবে দূরে থাকা সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত এসির ব্যবহারে, ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ