শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

পাথর রাজ্যের রাজকন্যা

সারমিন ইসলাম রত্না

পাথর রাজ্যের রাজকন্যা

রাজকন্যার মন খারাপ। কেন মন খারাপ? কাউকে কিছুই বলছে না। রাজা-রাণী জিজ্ঞেস করলেন, আমার সোনা মা, কী হয়েছে তোমার? রাজকন্যা কিছুই বলল না। শুধু জানালার দিকে তাকিয়ে থাকল। রাজা-রাণী মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন। তাদের একমাত্র কন্যার মন খারাপ। কিন্তু কেন? দিনের পর দিন কেটে গেল। কোনোভাবেই রাজকন্যার মন ভালো হলো না। রাজা হতাশ। রাজ দরবারে মন বসছে না তার। তবু প্রজাদের অভিযোগ তো শুনতে হচ্ছে। এমন সময় এক প্রহরী ছুটে এলো। জাঁহাপনা অচেনা একজন প্রাসাদে ঢুকতে চাইছে। রাজা ধমক দিয়ে বললেন, নিয়ে এসো। কেন আটকাচ্ছ? প্রহরী কাচুমাচু করে বলল, সন্দেহজনক মনে হলো। আহ.. এতো ভয় পেতে নেই।

 

অচেনা মানুষটি প্রবেশ করল। রাজাকে কুর্নিশ করে বলল, সালাম জাঁহাপনা। মানুষটিকে দেখে রাজাও অবাক হলেন! অল্পবয়সী যুবক- সাধারণ পোশাক পরিহিত। হাতে-পায়ে ধূলি কাঁদা মাখা। মুখ ভর্তি দাঁড়ি। চেহারাটি চাঁদের মতো সুন্দর। রাজা বললেন, হে যুবক, কী হয়েছে বলো? কেন এসেছো? অচেনা যুবক বলল, জাঁহাপনা আমি শুনলাম আপনার মন খারাপ। তাই মন ভালো করতে এসেছি। রাজা বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি কী করে জানলে? যুবক মৃদু হেসে বলল, প্রাসাদের বাইরে বলাবলি করছিল। রাজা বললেন, আমার মন ভালো করতে হলে তো আমার রাজকন্যার মন ভালো করতে হবে। তার মন খারাপ। তাই আমারও মন খারাপ। যুবকটি হাতজোড় করে বলল, জাঁহাপনা, যদি অভয় দেন তবে একটি কথা বলি। রাজা বললেন, অভয় দিলাম। যুবকটি নরম স্বরে বলল, আমি রাজকন্যার সঙ্গে দেখা করতে পারি? রাজা আগুন চোখে তাকালেন। রাগী কন্ঠে বললেন, কেন? যুবক বলল, রাজকন্যার মন ভালো করে দিতাম।

রাজকন্যাকে রাজ দরবারে ডাকা হলো। চাঁদের মতো আলো ছড়িয়ে রাজার পাশে বসলেন রাজকন্যা। রাজা বললেন, প্রিয় রাজকন্যা, একজন তোমার মন ভালো করতে এসেছে। রাজকন্যা নীরব। অচেনা যুবককে রাজকন্যার সামনে আনা হলো। রাজকন্যা হাসতে শুরু করলেন। রাজা লক্ষ করলেন, যুবককে দেখেই রাজকন্যার মন ভালো হয়ে গেল। তবে রাজকন্যা তখনও নীরব। রাজা ঝলমলে হাসি দিয়ে বললেন, হে অচেনা যুবক, আমার রাজকন্যার মন ভালো হয়ে গেছে। আমারও মন ভালো হয়ে গেছে। বলো তুমি কী চাও? অচেনা যুবকটি বলল, আমি কিছুই চাই না। মনি-মুক্তা ভর্তি ডালা তার সামনে ধরা হলো। যুবকটি সেই ডালা বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিল। রাজা অবাক হয়ে বললেন, এত দামি মণি-মানিক্য তুমি ফিরিয়ে দিচ্ছ? এমন মানুষ তো কখনোই দেখিনি। দুঃখিত! জাঁহাপনা, আমার এসবের দরকার নেই। মানুষের ঠোঁটের হাসি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। আর ওটাই আমি পেয়েছি।

রাজা-রাণী ভাবতে লাগলেন। কতশত চেষ্টা, তবু রাজকন্যার মন ভালো হলো না। কোথা থেকে অচেনা লোককে দেখে রাজকন্যার মন ভালো হয়ে গেল! রাণী তার রাজকন্যাকে প্রশ্ন করলেন, ও আমার মেয়ে, যুবককে দেখে তোমার মন ভালো হলো কী করে? রাজকন্যা বললেন, এই রাজপ্রাসাদ পাথরের। মানুষগুলোও পাথরের। এত পাথর দেখতে দেখতে মন কেমন হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল কোথাও নরম মাটি নেই। সবুজের মায়া নেই। রাণী বললেন, বাগানে তো প্রচুর মাটি। রাজকন্যা বললেন, মা, সেগুলো কেমন কৃত্রিম মনে হয়। ঐ মানুষটার চোখে কোনো পাথুরে ভাব ছিল না। চোখে ছিল ভালোবাসা। আর শরীরে ছিল মাটির গন্ধ।

 

কিচিরমিচির পাখি ডাকছে। লাল সূর্য এখনো সোনালি রং ধারণ করেনি। মিষ্টি মধুর বাঁশি বেজে উঠল। রাজা সিংহাসনে বসলেন। রাজ দরবারে উপস্থিত সবাই চমকে উঠল! রাজা  সাধারণ পোশাক পরেছেন। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। রাজা সবার উদ্দেশ্যে বললেন, শুভ সকাল। আমি একটি ঘোষণা করব। তোমরা প্রস্তুত? চারদিকে গুঞ্জন উঠল। হ্যাঁ আমরা প্রস্তুত। রাজা হাসিমুখে বললেন, আজ থেকে গাছ লাগানো কার্যক্রম শুরু হবে। রাজ্যের কোথাও পাথরের রাস্তা থাকবে না। হবে নরম মাটির রাস্তা। সেই রাস্তার পাশে থাকবে সবুজ গাছ। রাজপ্রাসাদের প্রতিটি কামরায় থাকবে বাহারি রঙের ফল ও ফুলের গাছ। শুধু তাই নয়, উপঢৌকনের সঙ্গে থাকবে রংবেরঙের ফুল। যখন পূর্ণিমা হবে রাজপ্রাসাদে কোনো আলো জ্বলবে না। আমরা চাঁদের আলোয় পূর্ণিমা উৎসব করব। চারদিক থেকে জয়ধ্বনি উঠল। জয় জাঁহাপনা, জয় রাজকন্যা চাঁদমণির।

 

মাত্র কয়েকদিনে পাথরের রাজ্য হয়ে উঠল সবুজে সবুজ। বাতাসে ভাসতে লাগল মিষ্টি মধুর ফুলের ঘ্রাণ। ডালে ডালে পাখিরা গান গাইতে শুরু করল। এ যেন রূপকথার রাজ্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর