শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

রংধনু

জুয়েল আশরাফ

রংধনু
রংধনুর এই রংগুলো চলে গেল সমুদ্রের পানিতে। সে জন্য সাগরের ভিতরের পৃথিবীটাও হয়ে উঠল অনেক সুন্দর ও রঙিন। এরপর বর্ণহীন দ্বীপটির নামকরণ করা হয় রঙিন দ্বীপ। রঙিন দ্বীপ এমনই এক দ্বীপ, যে দ্বীপে আছে নানা রং, আছে সুখ আর সেখানকার মানুষ হাসে প্রাণভরে। তারা যতই হাসবে, পৃথিবী ততই সুন্দর হবে...

সাগরের মাঝখানে একটা ছোট্ট দ্বীপ। অনেকেই বলে বর্ণহীন দ্বীপ। এই দ্বীপে কোনো রং নেই বলেই এরকম নাম। সবকিছু শুধু কালো এবং সাদা। শুধু সাদা, কালো ফুল।

সূর্যের রং সোনালি নয়, সাদা। জমিতে ফসলের মধ্যে টমেটো লাল নয় কালো হয়। দ্বীপে বসবাসকারী লোকেরা সাদা-কালো খাবার খায়। এমনকি তাদের স্বপ্নও সাদা-কালো রঙের।

রং না থাকায় এখানকার মানুষেরা বর্ণান্ধ হয়ে পড়ল। লোকজন খুব একটা হাসে না, খুব খুশিও না।

এখানকার রাজা-রানিরা শুনলেন পৃথিবীতে অনেক রং আছে। তারা চান তাদের দ্বীপেও অনেক রং আসুক। সাগরে আরও অনেক দ্বীপ রয়েছে। এমন এক দূর দ্বীপে এক বৃদ্ধ জাদুকর বাস করেন। একটা সময় ছিল, যখন তিনি একজন পরাক্রমশালী জাদুকর ছিলেন। কিন্তু বহু বছর ধরে তিনি কোনো জাদু দেখাতে পারেননি। ধীরে ধীরে তিনি জাদু মন্ত্রগুলো ভুলে যাচ্ছেন।

বর্ণহীন দ্বীপের রাজাও এই জাদুকরের কথা শুনেছেন। তিনি তার লোক পাঠালেন জাদুকরকে ডেকে আনতে। বৃদ্ধ জাদুকর আশ্চর্য হয়ে গেলেন এটা ভেবে  যে, হঠাৎ রাজার কেন তাকে প্রয়োজন পড়ল। ঘরের এক কোণ থেকে ব্যাগ তুলে নিলেন তিনি। ব্যাগে প্রচুর ধুলোবালি জমে ছিল। এতে জাদুকরের জিনিসপত্র, এগুলো তিনি আগে ব্যবহার করতেন। ব্যাগটা ঝেড়ে-মুছে কাঁধে নিয়ে রাজার লোকের সঙ্গে চললেন তিনি।

চার দিন ধরে তারা নৌকায় চলতে থাকেন। তারপর জাদুকর পৌঁছে গেলেন বর্ণহীন দ্বীপে। রাজা জাদুকরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। তাকে সসম্মানে বসিয়ে তারপর সৈন্যদের আদেশ দিলেন- যাও, জাদুকরকে তার ঘরে নিয়ে বিশ্রাম করতে দাও।

জাদুকর সত্যিই ক্লান্ত, কিছুক্ষণ ঘুমাতে চাইলেন। সন্ধ্যায় রাজা স্বয়ং তার ঘরে জাদুকরের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি জাদুকরকে স্বাগত জানালেন। তারপর তাকে সমস্যার কথা জানালেন। রাজা বললেন, ‘জাদুকর, আমাদের দেশে রং নেই। দেখুন, এখানে এসে আপনার রংও সাদা-কালো হয়ে গেছে। আমরা চাই আমাদের সব মানুষও সুখী হোক। তাদের জীবনে হরেক রকমের সুন্দর রং আসুক। আপনি আমাদের সাহায্য করুন।’ কিন্তু জাদুকর ভুলে গেছেন কীভাবে রং করতে হয়। ব্যাগটা উল্টে দেখলেন তিনি। একটা কাচের টুকরা, বিভিন্ন অদ্ভুত জিনিসপত্রসহ নিচে পড়ল। কৌতূহলে জাদুকর কাচের টুকরাটি হাতে নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দেখতে লাগলেন।

কাচের ওপর আলোর রশ্মি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অন্য প্রান্ত থেকে একটি রংধনু প্রাসাদের জানালা থেকে বেরিয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর একে একে সাতটি রং নেমে আসতে থাকে। প্রথমে লাল রং নেমে এলো। খেতের টমেটো, বাগানের আপেল, রাস্তার সংকেত, অগ্নিনির্বাপক, সবই লাল হয়ে গেল। তারপর এলো কমলা, তারপর হলুদ, তারপর সবুজ, তারপর নীল, তারপর গাঢ় নীল এবং সব শেষে বেগুনি। গোটা পৃথিবী সাতটি সুন্দর রঙে আঁকা হলো। রাজা-রানি খুব খুশি হলেন। জাদুকরকে ধন্যবাদ জানালেন এবং অনেক উপহার দিলেন। রংধনুর এই রংগুলো চলে গেল সমুদ্রের পানিতে। সে জন্য সাগরের ভিতরের পৃথিবীটাও হয়ে উঠল অনেক সুন্দর ও রঙিন। এরপর বর্ণহীন দ্বীপটির নামকরণ করা হয় রঙিন দ্বীপ। রঙিন দ্বীপ এমনই এক দ্বীপ, যে দ্বীপে আছে নানা রং, আছে সুখ আর সেখানকার মানুষ হাসে প্রাণভরে। তারা যতই হাসবে, পৃথিবী ততই সুন্দর হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর