বৃষ্টির কোনো বালাই নেই। রোদের প্রচন্ড তাপ। পুকুর খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। হারু মিয়ার পুকুর পাড়ে হিজল গাছের মগডালে মাছরাঙা যেন ধ্যানরত।
হিজল গাছের পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটি প্রজাপতি। মাছরাঙাকে দেখে থমকে গেল। আহা, কী রঙের বাহার! প্রজাপতি মাছরাঙাদের দূর থেকে খুবই ভালোবাসে। কাছে যেতে ভয় পায়, সন্দেহ হয় যদি গিলে খেয়ে ফেলে।
মাছরাঙা প্রজাপতির ডানার শব্দ পেয়ে ধ্যান ভেঙে যায়। বলে, কে রে? ও মা প্রজাপতি! আস, কাছে আস দু-চারটা কথা বলি।
প্রজাপতি ভয়ে ভয়ে কাছে এলো।
মাছরাঙা বলল, মহান আল্লাহ তোদের এত রূপ দিয়েছে দেখে খুবই মায়া হয়।
প্রজাপতি : ভাইয়া তোমার কি আমার চেয়ে কম রূপ?
আস্তে আস্তে মাছরাঙা ও প্রজাপতির মাঝে খুব সখ্য গড়ে ওঠে। ওরা বিরূপ প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে আলাপ করে। ওদের ধারণা এর জন্য একমাত্র মানুষই দায়ী।
মাছরাঙা : পুকুর খাল বিল ভরাট হচ্ছে। এখন আর কেউ নতুন পুকুর খনন করে না, কেউ পুকুর-খাল কাটে না। মানুষ গাছপালা কেটে উজাড় করে কিন্তু নতুন গাছ লাগায় না।
প্রজাপতি : হ্যাঁ ভাইয়া, শুনেছি আগে মানুষ শখ করে গাছ লাগাত, শখ করে ফুল বাগান করত। এখন সব কিছুতেই ভাটা পড়েছে।
মাছরাঙা : সত্যি তাই...
প্রজাপতি বলল, ভাইয়া আরেকটি কথা। আমরা অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। শক্ত খাবার খেতে পারি না। ফুলের মধু ও পানি খেয়ে বেঁচে থাকি। এখন অনেক কষ্টে খুঁজে খুঁজে খাদ্য সংগ্রহ করি। মাছরাঙা হেসে বলল, বোন আমাদেরও কী কম কষ্ট? সহজে মাছ শিকার করতে পারি না। পুকুর-খাল বিলে পানি নেই, মাছ নেই। শকুন চিলের সন্ত্রাসী আচরণের জন্য নদীতে যেতেও ভয় লাগে। মানুষের কীটনাশক ব্যবহারে পোকামাকড়ও কমে গেছে। অনেক খুঁজেও তেমন পোকামাকড় পাই না।
প্রজাপতি : আমাদের মতো তোমাদেরও অনেক কষ্ট।
মাছরাঙা : থাক বোন, আজকে আর কষ্টের কথা থাক।
চল আজকে দুজনে সারা দিন ঘুরবো।
প্রজাপতি আনন্দে বলল, আচ্ছা ভাইয়া, আচ্ছা।
মাছরাঙা ও প্রজাপতি পুটাইল বিলের দিকে রওনা হলো।
বিলটি খাঁ খাঁ করছে। দু-একটি কাঁকড়া চলাচল করছে। শুকনো জায়গায় একটি ডিঙি পড়ে আছে। ডিঙির মাঝে শুকনো গাছের ডাল। প্রজাপতি ডালে আর মাছরাঙা ডিঙির গলুইতে বসে প্রাণ খুলে গল্প করছে।
প্রজাপতি : ভাইয়া মাছরাঙা বিভিন্ন জাতের যেমন ছোট নীল মাছরাঙা, সাদা গোঁফ মাছরাঙা, লাল মাছরাঙা, মেঘ মাছরাঙা, সাদা গোলা, লাল, কালো, দারুচিনি, সবুজসহ বিভিন্ন জাতের মাছরাঙা থাকলেও আমার কাছে তোমার মতো সবুজ মাছরাঙাকেই বেশি ভালো লাগে।
মাছরাঙা : বোন তোদেরও জাত বিভিন্ন বর্ণের থাকলেও তোর মতো লালচে প্রজাপতি আমার খুবই পছন্দ।
আস্তে আস্তে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল। বাতাস বইতে লাগল। মাছরাঙা বলল, বোন এখানে থাকা নিরাপদ নয়, চল লোকালয়ে যাই।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলো। মাছরাঙা সামনে আর প্রজাপতি পিছন পিছন ছুটল। বৃষ্টির পানিতে প্রজাপতির পাখা ভারী হয়ে গেল। উড়তে কষ্ট হচ্ছে। অবশেষে একটি গাছের ডালে বসে পড়ল।
মাছরাঙা পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রজাপতি নেই। পিছনে ফিরে খুঁজতে লাগল। প্রজাপতি মাছরাঙাকে আবছা আবছা দেখতে পেলেও বৃষ্টির জন্য যেতে পারছে না।
বৃষ্টি থেমে গেল। সূর্যের আলো পুরো এলাকা দখল করল। সূর্যের আলোয় প্রজাপতির গায়ের রঙ আরও উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
প্রজাপতি খুবই কান্ত ও ক্ষুধার্ত। ফুলের মধুর সন্ধানে ডানা মেলে ছুটে গেল।