সরদার বাড়ির মুরগিটা পাড়া বেড়াতে বেরিয়ে পথ হারিয়ে ফেলল। ওদিকে আকাশে মেঘ জমে আছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে।
পাশেই একটা ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকছে শুনে মুরগি বলল, ‘আমি বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে পাচ্ছি না আর তুমি ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকছো?’
ব্যাঙ বলল, ‘ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাকছি সে কী আর সাধে! দেখছো না আকাশে মেঘ করে আছে, একটু পরেই বৃষ্টি হবে। যা হোক, চিন্তা করো না। আমি তোমাকে বাড়ি ফেরার পথ খুঁজতে সাহায্য করবো। চলো আমার সাথে।’
দুজনে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে দেখা পেল একটা কুকুরের। ব্যাঙ বলল, ‘ও কুকুর! সরদার বাড়ির পথটা কোনদিকে তুমি চেনো?’
কুকুর বলল, ‘না গো! চিনি না। কি করে চিনবো? আমি তো এই গাঁয়েই থাকি না। আমার গাঁয়ের নাম মতলবপুর। সেখানে এক দুষ্টু বালক আমাকে শুধু শুধু দৌড়ানি দিল। যদি মারে! সেই ভয়ে আমি এক দৌড়ে এই গাঁয়ে চলে আসছি।’
ব্যাঙ বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি চলো আমাদের সঙ্গে। সরদার বাড়ির পথ খুঁজতে তোমাকে কাজে লাগবে।’
তিনজনে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে একটা বিড়ালের দেখা পেল। কুকুর বলল, ‘ও বিড়াল! সরদার বাড়ির পথটা কোনদিকে বলতে পারো?’
বিড়াল বলল, ‘আলবাত পারি। তোমাদের নিয়ে যেতে পারি এক শর্তে। যদি আমাকে কিছু খেতে দাও।’
মুরগি বলল, ‘আগে নিয়ে যাও, আমি তাহলে তোমার জন্য একটা ডিম পারব। সরদারের বউকে বলব ডিমটা যেন সেদ্ধ করে তোমায় খেতে দেয়।’
বিড়াল বলল, ‘বলবে ভালোভাবে সেদ্ধ করে দেয় যেন। কাঁচা ডিম বা আধা সেদ্ধ ডিমে তিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা আমার স্বাস্থ্যের জন্য তিকর।’
বিড়ালের দেখানো পথে ওরা হাঁটতে থাকল। কিছু পথ যাওয়ার পর একটা গরুর সঙ্গেও দেখা। সবাইকে অদূরে দাঁড় করিয়ে বিড়াল গরুটার কাছে এসে কানে কানে বলল, ‘আমায় একটা উপকার করো গরুজি। ডিম খাওয়ার লোভে চাপা মেরে এখন মহাবিপদে আছি। আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করো প্লিজ।’
গরু বলল, ‘অত ঘাবড়িও না তো, বিড়াল। কি হয়েছে খুলে বলো।’
বিড়াল খুলে বলল। সব শুনে সে কী হাসি গরুর! হাম্বা হাম্বা বলে হেসেই যাচ্ছে। হাসি থামিয়ে বলল, ‘আমি একবার খাওয়ার জন্য ভুলে সরদারের খেতে ঢুকে গিয়েছিলাম। সরদার তখন আমায় ধরে এনে তার বাড়িতে বেঁধে রাখে। সেই থেকে আমি চিনি সরদারের বাড়ি। চলো তোমাদের চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
ফের হাঁটতে শুরু করে সবাই। মুরগিকে এত কাছে পেয়ে গরু বলল, ‘কী গো মুরগি! শুনেছি তুমি নাকি আজকাল দুধ দিয়ে বেড়াচ্ছো?’
‘এরকম অদ্ভুত কথা আমিও শুনেছি। তুমি নাকি আজকাল ডিম পাড়ছো?’ মুরগি গরুকে বলল।
গরু বলল, ‘আমি দুধ দিয়েই কূল পাই না তা ডিম পারবো কখন!’
‘মুরগি বলল, ‘আমিও! ডিম পেরেই কূল পাই না দুধ দেবো কখন!’
ওদের কথা শুনে ব্যাঙ আর কুকুর অবাক! বলল, ‘তোমাদের রহস্যটা কী! পুরো ঘটনা খুলে বলো তো দেখি!’
দুধ, ডিমের কথা শুনে বিড়ালের জিভে জল। সে জিভ নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘রহস্যের কথা আমি জানি।’
সবাই মিলে বিড়ালকে অনুরোধ করল গরুর ডিম পাড়া আর মুরগির দুধ দেওয়ার রহস্যের কথা বলতে। বিড়াল বলল, ‘কদিন আগে পত্রিকায় একটা আষাঢ়ে গল্প ছেপেছে। লিখেছে মাসুম মাহমুদ। ওই গল্পে মুনাম আর নির্ভয় বলাবলি করছিল ওদের একজনের বাড়িতে গরু ডিম পাড়ে, আরেকজনের বাড়িতে মুরগি দুধ দেয়। সেই গরুর ডিম আর মুরগির দুধ দিয়ে বানানো হয় সুস্বাদু পুডিং। মুনাম, নির্ভয়ের বন্ধু জুহায়রা সেই পুডিং খেয়ে এক মাস নাকি স্বাদ ভুলতে পারেনি।’
ব্যাঙ বলল, ‘ওহো! ওই গল্প আমিও পড়েছি। দারুণ।’
কুকুর বলল, ‘আমিও পড়েছি। দারুণ ছিল গল্পটা।’
কথা বলতে বলতে ওরা সরদার বাড়ির সদর দরজায় এসে হাজির। মুরগিকে নিরাপদে পথ চিনিয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।