প্রিয় নবী (সা.)-এর উম্মত হয়ে আমরা গর্ব করি। অহংকার করি। শুকরিয়া আদায় করি। প্রতি বছর রবিউল আউয়াল মাস এলে মিলাদ পড়ি। মিষ্টি খাই। নবীর প্রেম-ভালোবাসায় আরও অনেক কিছু করি। প্রমাণ করতে চাই যে, আমি নবীর খাঁটি প্রেমিক। কিন্তু নবীর জীবন নিয়ে আলোচনা করি না। তা জানারও চেষ্টা করি না। জানলেও তা মানার চেষ্টা করি না। রসুলে আকরাম (সা.) অনেক কষ্টে জীবন কাটিয়েছেন। কখনো বিলাসিতা করেননি। ঠিকমতো তিন বেলা খাবারও খাননি। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি স্বীয় ভাগিনা উরওয়াহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-কে বলেছেন, হে ভাগিনা! আমরা (মহানবী সা.-এর পরিবারবর্গ) এক চাঁদ অতঃপর এক চাঁদ করে পূর্ণ দুই মাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর তৃতীয় মাসের চাঁদও দেখতে ছিলাম। অবস্থা এরূপ ছিল যে, নবী (সা.)-এর কোনো স্ত্রীর ঘরে আগুন জ্বলেনি (রান্না হয়নি)। উরওয়াহ (রা.) বলেন, আমি বললাম, তবে আপনারা কীভাবে জীবন ধারণ করলেন? তিনি বলেন, দুটি কালো বস্তু দিয়ে। অর্থাৎ খেজুর ও পানি দিয়ে। মহানবী (সা.)-এর কতিপয় প্রতিবেশীর কাছে দুধালো জানোয়ার ছিল। তাদের থেকে কেউ যদি হাদিয়াস্বরূপ দুধ প্রেরণ করতেন, তাহলে মহানবী (সা.) তা আমাদের পান করাতেন। (বুখারি)। অন্য বর্ণনায় এসেছে। হজরত আয়েশার (রা.) আত্মীয় হজরত মাসরুক (রা.) বলেন, আমি হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি আমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেন আর বললেন, আমি যখনই উদর পূর্তি করে খাবার গ্রহণ করি, তখনই আমার হৃদয় ক্রন্দন করতে চায়। ফলে আমি কাঁদি। হজরত মাসরুক (রা.) বললেন, আপনার হৃদয় কেন কাঁদতে চায়? তিনি বলেন, রসুল (সা.)-এর সেই অবস্থার কথা আমার মনে পড়ে, যে অবস্থায় তিনি চিরবিদায় নিয়ে গেছেন। আল্লাহর শপথ! এক দিনে দুবার গোশত বা রুটি ভক্ষণের সুযোগ তার কখনো আসেনি। (তিরমিজি, শামায়েল)। অর্থাৎ রসুল (সা.) জীবনযাপন করতেন খুব কষ্টে। অন্য হাদিসে এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর বিবিগণ পরপর তিন দিন গমের রুটি দ্বারা পেট ভরে আহার করেননি। এমনকি তিনি দুনিয়া থেকে (এ অবস্থায়) প্রস্থান করেছেন। (তিরমিজি)।
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।