বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রতিটি বিজয় আল্লাহর ইচ্ছায় অর্জিত হয়

আবদুর রশিদ

ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। বাংলাদেশের মানুষের জন্য পরম গৌরবের মাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। প্রতিটি বিজয় মহান আল্লাহর ইচ্ছায় অর্জিত হয়। অন্যায়কারীদের সঙ্গে ন্যায়ের পক্ষের যুদ্ধে সব সময়ই ন্যায়ের জয় হয়। অন্যায়কারীদের পরাজয় হয়। আল কোরআনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা বিজয় সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’ ৪৮:১। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর উপরোক্ত আয়াতটি নাজিল হয়। মুমিনদের অনেকেই এ সন্ধির যথার্থতা নিয়ে সংশয়ে ছিল। আল্লাহ সে সংশয় নিরসনে বিজয়ের আগাম বার্তা দেন। ওই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে আল্লাহই বিজয় দানের মালিক। বিজয় অর্জনে তার রহমতের ওপর ভরসা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে এক পক্ষে ছিল বাংলাদেশের মজলুম জনগণ। আরেক পক্ষে ছিল জবরদখলকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাদের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে এ-দেশীয় ঘাতক-দালাল নিয়ে গঠিত বিভিন্ন বাহিনী, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষাবলম্বনকারী মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত। তাদের হত্যা করত। সম্পদ লুটপাট ও সম্ভ্রমহানি করত। জ্বালিয়ে দিত সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পদ। মসজিদ-মন্দিরও তাদের জিঘাংসা থেকে রক্ষা পায়নি। অথচ ধর্মের নামে তারা এ দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আল কোরআনে ভূ-প্রতারকদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে ‘আর কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান এনেছি, অথচ আদৌ তারা ইমানদার নয়।’ সুরা বাকারা, আয়াত ৮।

ইসলামে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের রক্ত ঝরাবে এমন সংঘাতকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের ধিক্কার দিয়ে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তাদের (কপট বিশ্বাসীদের) বলা হয় যে দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি কোরো না। তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করছি। মনে রেখ তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১১-১২।

ইসলাম যুদ্ধবিগ্রহের সময়ও নিরপরাধ শিশু ও নারীকে হত্যা, তাদের বাড়িঘর বৃক্ষসম্পদ জ্বালিয়ে দেওয়া অনুমোদন করে না। হাদিসেও এ সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ-দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে ইসলামী বিধান লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষকে হত্যা, নারীর সম্ভ্রম লুট এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার অপরাধে জড়িত ছিল বলেই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের পরাজয় এবং মজলুমদের প্রতিনিধিত্বকারী মুক্তিবাহিনীর বিজয় নিশ্চিত হয়। বিজয়ের এ মাসে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের মাগফিরাতের কামনা করছি। আমাদের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর সহায়তা কামনা করছি।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর