আল কোরআন মহান আল্লাহর বাণী। ইসলামের মূল তত্ত্ব ও তথ্যের প্রধান উৎস। আল কোরআন মানবতার মুক্তিসনদ, হেদায়াতের আলোকবর্তিকা। এর বাণী বিশ্বজনীন, সর্বজনীন, চিরন্তন ও শাশ্বত। মানবতার উৎকর্ষ সাধনে ও সভ্যতার ক্রমবিকাশে এর অবদান অতুলনীয়, মানুষের সার্বিক উন্নতি ও প্রকৃত সফলতার কালজয়ী পাথেয়। কোরআনে কারিমের তিলাওয়াত মুসলমানের জন্য অন্যতম ইবাদত, শ্রেষ্ঠতম জিকির এবং ইমান বৃদ্ধি ও আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় আস্থা অর্জনের অন্যতম সহায়ক। নামাজ শুদ্ধভাবে আদায়ের জন্য কোরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত একান্ত জরুরি। এ কিতাবের প্রতিটি অক্ষর তিলাওয়াতে লাভ হয় ১০টি করে নেকি। এমনকি এ মহাগ্রন্থের তিলাওয়াত শ্রবণকারীর ওপর নাজিল হয় করুণাময়ের অসীম রহমত। তিলাওয়াতকারীর জন্য এ কোরআন পরকালে সুপারিশ করবে। এক কথায় কোরআন হলো আমাদের ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণের মহাসমুদ্র। মহান প্রভু ইরশাদ করেন, ‘আর যখন তাদের কাছে পাঠ করা হয় কোরআনের আয়াত তখন তাদের ইমান বেড়ে যায়।’ সুরা আনফাল আয়াত ২)। অন্য আয়াতে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আর যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন মনোযোগসহকারে শোনো এবং নিশ্চুপ থাক, যাতে তোমাদের ওপর রহম (দয়া) করা হয়।’ সুরা আরাফ আয়াত ২০৪। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে ও নামাজ কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তারা এমন ব্যবসা আশা করে যাতে কখনো লোকসান নেই।’ সুরা ফাতির আয়াত ৩৫। রসুলুল্লাহ (সা.) ফরমান, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষরও পড়ে এর বিনিময়ে সে একটি নেকি লাভ করবে। আর এক একটি নেকি ১০ গুণে পরিণত হবে। আমি বলছি না আলিফ লাম মিম একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর ও মিম একটি অক্ষর।’ তিরমিজি। উল্লেখ্য, উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত ফজিলত অর্জনের জন্য কোরআনে কারিমের অর্থ বুঝে পড়তে হবে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। বরং মহানবী (সা.) কোরআন তিলাওয়াতের ফজিলত বর্ণনার্থে যে উদাহরণ পেশ করেছেন, ‘আলিফ লাম মিম’-এর অর্থ কেবল আল্লাহ জানেন। তবু তা তিলাওয়াত করলে প্রতি অক্ষরে ১০টি করে নেকি লাভ হবে তিনি বলেছেন। এ ছাড়া রসুলুল্লাহ (সা.)-কে এ জগতে পাঠানোর একটি বৃহৎ উদ্দেশ্য হলো লোকদের আল্লাহর কোরআনের আয়াতগুলো তিলাওয়াত করে শোনানো। সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৬৪।
অতএব কোরআন তিলাওয়াত করাই মহৎ কাজ ও বিশাল নেকি অর্জনের উপায়। তবে কোরআনে কারিমের অর্থ ও মর্ম বোঝা, তা নিয়ে গবেষণা করা ও কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন গড়া অত্যন্ত জরুরি। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘তারা কি কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না, না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।’ সুরা মুহাম্মদ আয়াত ২৪। অন্য আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন, ‘এটি এক কিতাব, তা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যা কল্যাণময়, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমানরা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।’ সুরা সোয়াদ আয়াত ২৯।
অতএব প্রতিটি মানুষ কোরআনে কারিম তিলাওয়াত করবে, আয়াতের মর্মার্থ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করবে, তা জীবনে বাস্তবায়ন করবে এটা কোরআনে কারিমের দাবি। অবশ্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুসারে কোরআন গবেষণার বিভিন্ন পর্যায় আছে। আছে তা নিয়ে গবেষণার জন্য ব্যাকরণ ও মূলনীতি। যথাযথ ব্যাকরণ, মূলনীতি ও পরিপক্ব জ্ঞান ছাড়া যে কোনো বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিপদের আশঙ্কা আছে। এজন্যই আল্লাহ এ বিষয়ে পরিপক্ব জ্ঞানীদের কোরআন গবেষণার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বুদ্ধিমান লোকেরা যেন উপদেশ গ্রহণ করে।’ সুরা সোয়াদ আয়াত ২৯। এজন্যই আল্লাহর কিতাব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নবীদের তিনি পাঠিয়েছেন। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘আমি আপনার ওপর কোরআন অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের বর্ণনা করেন।’ সুরা আন নাহল আয়াত ৪৪। মূল কথা, কোরআনে কারিমের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত এবং তা বোঝার জন্য প্রচেষ্টা ও জীবনে বাস্তবায়ন করা সবই জরুরি। তবে তা অর্জন করতে হবে যথাযথ মূলনীতির আলোকে, বিজ্ঞদের নির্দেশনা অনুসারে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।