যাকে সৃষ্টি না করলে ত্রিভুনের কোনো কিছুই আল্লাহ সৃষ্টি করতেন না তিনি আমাদের পেয়ারা নবী (সা.)। রসুল (সা.)-এর শান-মানের উচ্চতা-গভীরতা কোনো মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব। তাই তো শেখ সাদি (রহ.) বলেছেন, হে প্রিয় হাবিবুল্লাহ (সা.)! আপনার শান বর্ণনা করার ইলম আমার নেই। এক কথায় আপনার শান হলো সৃষ্টিরাজ্যে আল্লাহর পরই আপনার অবস্থান। হুজুর (সা.)-এর শান সম্পর্কে আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ওয়ারাফানা লাকা জিকরাক। ‘হে হাবিব! আপনার শান আমি বাড়িয়ে দিয়েছি।’ (সুরা শারহি, আয়াত ৪) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে আবু সাউদে মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ বিন মুস্তফা উমাদি (রহ.) লেখেন, অন্তত আটভাবে আল্লাহ হুজুর (সা.)-এর জিকরকে উঁচু করেছেন। যত জায়গায় আল্লাহর জিকির হয় তত জায়গায়ই হুজুর (সা.)-এরও জিকির হয়। যেমন কলমা শাহাদাত, আজান, ইকামত ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের সঙ্গে হুজুর (সা.)-এর আনুগত্যও ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ নিজে হুজুর (সা.)- এর ওপর সালাত পড়েন। তিনি ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন রসুল (সা.)-এর ওপর সালাত পড়ার জন্য। মোমিনরাও তাঁর ওপর সালাত পড়ে। আল্লাহ হুজুরের নাম রেখেছেন রসুলুল্লাহ ও নবীউল্লাহ। (তাফসিরে আবু সাউদ, নবম খন্ড, ১৭৩ পৃষ্ঠা)
ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, তাবেয়ি মুজাহিদ (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, হে হাবিব! আমি আপনার মর্যাদা এতই সমুন্নত করেছি যে আপনার জিকির ছাড়া আমার জিকির সম্পূর্ণ হয় না। যেমন কলমা শাহাদাত, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহ। মুফাসসির কাতাদা (রহ.) বলেন, আল্লাহ হুজুরের সম্মান বাড়িয়েছেন দুনিয়া-আখেরাত দুই জগতেই। কোনো খতিব নেই যিনি আল্লাহর জিকির করল কিন্তু সঙ্গে রসুলের জিকির করেনি। এমন কোনো মুসলমান নেই যে কলমা শাহাদাত পাঠ করল কিন্তু রসুলের জিকির করেনি এবং এমন কোনো নামাজি নেই যে আল্লাহ ও রসুলের জিকির না করেই সালাত শেষ করে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, অষ্টম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা)। জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) লেখেন, হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, একদিন জিবরাইল আমার কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর বন্ধু! আপনি কি জানেন কীভাবে আল্লাহ আপনার মর্যাদা বাড়িয়েছেন? আমি বললাম, আল্লাহই ভালো জানেন। জিবরাইল বললেন, আল্লাহ বলেছেন, ইজা জুকিরতু জুকিরতা মায়ি। ‘হে হাবিব! পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমার জিকির হবে, সঙ্গে আপনারও জিকির হবে।’ এভাবেই আপনার জিকির সমুন্নত করেছি। ইমাম সুয়ুতি আরও বলেন, এ আয়াত প্রমাণ করে যে কোনো খুতবা ও জানাজারনামাজে হুজুর (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া ওয়াজিব। (আল ইকলিলু ফি ইসবাতিত তানজিল, প্রথম খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা) আল্লাহর হাবিবের শান এত বেশি যে তাঁকে কষ্ট দেওয়া মানে আল্লাহকেই কষ্ট দেওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৫৭) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতা করে তার জন্য অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটা মহালাঞ্ছনা।’ (সুরা তওবা, আয়াত ৬৩) ‘আর যে হিদায়াত পাওয়ার পর রসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মোমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফেরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ।’ (সুরা নিসা, আয়াত ১১৫) আল্লাহ আমাদের ধর্মের সঠিক মর্ম বোঝার তৌফিক দিন।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।