কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের যত অর্জন বাংলা ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন সব এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত ধরে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনে কতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেল। জ্বালাও-পোড়াও করে দেশের এত সম্পদ নষ্ট করা হলো কেন। এই কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যাদের মেধা, মননশীলতা নিয়ে গর্ব করে বলি ২০৪১-পরবর্তী উন্নত বাংলাদেশের কর্ণধার হবে আমাদের এই সন্তানরা, আমাদের নতুন প্রজন্ম। এখনো যারা দেশ পরিচালনা করছেন তাঁদের অনেকে এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গর্ববোধ করেন।
কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সরকারের কোনো দ্বিমত ছিল না। অথচ কী দেখলাম! আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। আমি বিস্মিত! হতভম্ব! এবং একই সঙ্গে দারুণ মর্মাহত। দেশের শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন প্রণয়ন বিভাগ পারস্পরিক মর্যাদা ও শ্রদ্ধা অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করে। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করে। দেশ কীভাবে চলে বা এক কথায় দেশ কীভাবে কাজ করে তার ধারণা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান হিসেবে জানা থাকা কাম্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবীগণ ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। যেখানে প্রগতিশীল মুক্তচিন্তার চর্চা হতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন যেসব ছাত্র জনতা, বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন পেশাজীবী, বাঙালি, সশস্ত্র বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, আনসার বাহিনী ও নাম না জানা লাখ লাখ বাঙালি নর-নারী আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পূর্ব বাংলার সীমাহীন বৈষম্য নিরসনে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত ও মহান রাজনৈতিক নেতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে একশ্রেণির সুবিধাবাদী দালাল পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর হিসেবে কাজ করে। তাদের কাজ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর তাঁবেদারি করা। যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর, পরিবার-পরিজনদের চিনিয়ে দেওয়া, বাংলার নারীদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে হানাদারদের দোসর হিসেবে কাজ করা। যুদ্ধকালীন তারা রাজাকার নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার শব্দটি এক ধরনের অবমাননাকর শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন রাজাকার শব্দটি নেতিবাচক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক যিনি তাঁর দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা, মানবিকতা, ধৈর্যশীল পরিচয়ে একজন প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক, যার হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দেখেছি শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে তিনি কতটা সম্মান করেন, কতটা দরদ দিয়ে দেখেন। একদিনের কথা আমার মনে আছে টিভির পর্দায় মেয়েদের কোটাবিরোধী উচ্চকণ্ঠ শুনে তিনি অনেকটা স্বগতোক্তি করে বলেছিলেন, ‘কাদের জন্য আমি করতে চাই! যাদের জন্য, তাঁরাই যখন চায় না তখন বাতিল হোক।’ ২০১৮ সালে নির্বাহী বিভাগের একটি পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি নিয়োগে কোটা বাতিল করা হয়। ২০১৮ থেকে ২০২৪-এর জুন পর্যন্ত কোনো কোটা সংরক্ষণ হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান হিসেবে কয়েকজন এই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করলে হাই কোর্ট থেকে পরিপত্র বাতিল করে কোটা বহাল রাখার আদেশ হয়। সরকার তিন দিনের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে আদেশ স্থগিত করে আদালত থেকে শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এখানে সরকারের অনুরোধ ছিল আদালতের মাধ্যমে আদেশ হবে এবং আইনমন্ত্রী বলেছিলেন আশা করা যায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হবে না। এই তো মূল ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরের ওপর সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের লিডিং প্রশ্নকে মুখে উচ্চারণ করে পাল্টা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকদের উদ্দেশে। এরপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত রাখার একটি জনপ্রিয় সেøাগানকে বিকৃত করে ‘রাজাকার’ শব্দটি বসিয়ে নেয়। তখনই সবাই বুঝতে পেরেছে নেপথ্যে মুরগির পালে শেয়াল ঢুকেছে। আন্দোলনটি তার অরাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে ধ্বংসে উন্মত্ত সরকার হঠানোর একটা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতার সূতিকাগার বলা হয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা কি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস জানে না? তাঁরা কি জানে না স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম প্রহরে প্রথম আক্রমণ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে, রোকেয়া হলের নির্যাতনের কাহিনি তাদের কেউ বলেনি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তফা আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল, রোটি আওরাত’ বা বীরউত্তম মেয়র (অব.) রফিকুল ইসলামের ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বই কৌতূহলবশত পড়ে দেখেনি? দেশ স্বাধীন না হলে তো প্রথম শ্রেণির চাকরির স্বপ্ন অধরা রয়ে যেত। যেসব মুক্তিযোদ্ধা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন তারাই আমাদের পূর্বপুরুষ। কারোরই ফিরে আসার কথা ছিল না। ফিরে এসে পরিবার পরিজনও সবাই পাননি। আজ কতজনই বা বেঁচে আছেন। তাঁরা আমাদের সূর্যসন্তান। তাঁদের প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার সম্মান দেখায়নি। আজকের প্রজন্ম জানে না যে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের জুলুম, নির্যাতন ও হয়রানির কাহিনি। মুক্তিযোদ্ধার কোটা বিতর্কে তাঁরা আহত হন, অসম্মানিত বোধ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কোমলমতি এই কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখে এবং কতিপয় উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক দল ফায়দা লুটবার পাঁয়তারা করছে বুঝতে পেরে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করে দেন এবং দাবি আদায়ের আশ্বাস দেন। এরপর জাতি দেখেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী জঙ্গি দল কীভাবে একের পর এক ছাত্রদের উসকানি দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে।
বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে রামপুরা টিভি ভবন, বনানীর সেতু ভবন, বিআরটিএ ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, ওয়াসা শোধনাগার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিটিআরসির ডেটা সেন্টার, গর্বের মেট্রোরেল মিরপুর স্টেশন, এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা, হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা, ঢাকার সব পুলিশ বক্স, ফুট ওভারব্রিজ, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কায়দায় পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়েও তাদের ধ্বংসলীলা নিবৃত্ত করতে পারেনি। সন্ত্রাসীরা দেশের মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, জীবন রক্ষাকারী ফায়ার সার্ভিসের মূল্যবান গাড়ি, সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী ট্রাক ধ্বংস করে স্বাভাবিক নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত করেছে। যে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য মেট্রোরেল ছিল আশীর্বাদ এমন কেউ নেই যে এখন ভোগান্তিতে পড়বে না। কপাল পোড়া জাতি আমরা, ভালো কিছু সয় না আমাদের।
আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ধরনের ভয়ংকর সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়নি। ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষীরা রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা এই ধ্বংসযজ্ঞে মদত দান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাদের প্রকাশ্য কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি, তবে শুরুতে তাঁরা তাঁদের পেনশন স্কিম প্রত্যয় নিয়ে আন্দোলন রত ছিলেন। নগরে আগুন লাগলে দেবালয়ও রক্ষা পায় না। শিক্ষকরাও নেতৃত্বে নিয়ে ছাত্রদের বোঝাতে পারতেন। হয়তো পরিস্থিতি আমার কল্পনার চেয়েও ভয়াবহ ছিল।
সারা দেশের জঙ্গিরা একত্রে বাংলাদেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্নয়নের সব চিহ্নকে যেন ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। চট্টগ্রামে হাত-পায়ের রগ কেটে ছাত্রদের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের হাত-পা কেটে মৃতদেহ লটকিয়ে দেওয়া, গাজীপুরের একজনকে হত্যা করে লটকিয়ে দেওয়া, নরসিংদীতে জেলখানা থেকে অস্ত্র লুট ও সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামিদের বের করে নেওয়া এসব কারা করেছে, এখন তা সবাই জানে।
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা নিরীহ ভঙ্গিতে বলছে তাদের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যক্কারজনক সেøাগানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলানোর প্রতিবাদে শ্রদ্বেয় জাফর ইকবাল স্যার তাঁর অনুভূতি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর একজন শিক্ষক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় যে মন্তব্যটি করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি নিজেকে হেয় করেছেন এ মন্তব্য করে। উনার উসকানিমূলক কিছু দায়িত্বহীন স্ট্যাটাস আমি দেখেছি। উনিও দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দিলে তো এই সর্বনাশ হতো না।
গত চার বছর মেয়েদের কোটা না থাকায় মেয়েরা চাকরিতে কেমন আসছে সেই সংখ্যা বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত কৌতূহলে প্রায়ই বিপিএসসি মেম্বার স্যারদের সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করতাম, চার-পাঁচটা বোর্ডে আমি নিজেও ছিলাম, আমি সন্তোষজনক জবাব পাইনি। মেয়েরা আসতে পারছে না। তারপরও মেয়েরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে সমানে সমান লড়াই করতে চায় দেখে খারাপ লাগেনি। বারবার মনে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এটা মানায়! আজ নিশ্চয়ই তারা দেখছে কী সর্বনাশের আগুন তারা ছড়িয়ে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলেছে।
আমার অনেকবার সুযোগ হয়েছে চাকরির ভাইভা বোর্ডে থাকার। ঢাকা ইউনিভার্সিটির কোনো শিক্ষার্থীকে সব সময় আমার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বড় মনে হতো। মনে হতো ওরা অনেক বড় বিদ্যাপীঠ থেকে এসেছে, নিশ্চয়ই ওদের মননশীলতা সেরা। আমার কাছে ওদের মূল্যায়ন হতো শীর্ষে। আমার মনে হচ্ছে তাদের হয়তো ভুল বোঝানো হয়েছে। অভিমান বা হতাশা থেকে তারা এসব আচরণ করেছে। তাই যেন হয়। ছাত্রলীগ, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ তাদের রয়েছে। তাদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কোটার সংস্কার সবাই চায়, তাহলে বিরোধ কেন? তাদের কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত বা কর্মকান্ডের দায় সরকারের ওপর পড়বে তাদের মনে রাখা উচিত ছিল। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশে না দাঁড়িয়ে তারা মুখোমুখি হলো কেন বুঝতে পারছি না।
এই দেশের যা কিছু অর্জন বাংলা ভাষা থেকে স্বাধীনতা সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি। আজ যে প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য, ইতিহাস, পূর্বপুরুষের গৌরববোধ যদি থাকত তবে অন্ধের মতো কারও দেওয়া ন্যক্কারজনক সেøাগান তারা কণ্ঠে তুলে নিতে পারত না। ভিন্নমত অনেকের থাকতে পারে। আমার সব অভিমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি, যাদের অন্যায়ভাবে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলভারে গাছ নত হয়। অহমিকা, দাম্ভিকতা বা উচ্ছৃঙ্খলতা নিজের দলের লোকজনও পছন্দ করে না। ছাত্রলীগের অতীত গৌরবময়। সেই ভাবমূর্তি রক্ষা করে চলাটাই তাদের কর্তব্য- বিষয়টি ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে মনে রাখতে হবে।
একটুখানি ভুলের তরে অনেক বিপদ ঘটে- আমরা পড়েছি। এখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ভুল বার্তা দিয়েছে। এই দেশকে ভালোবাসতে হলে এর গৌরবগাথা নিয়ে গর্ব করার মন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনসহ নাম না জানা শহীদের নিঃস্বার্থ ত্যাগে পাওয়া স্বাধীনতা পরাজিত শক্তিরা এখনো ব্যর্থ রাষ্ট্র করার চেষ্টা করছে।
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমরা তাঁদের উত্তরাধিকারী। তাঁরা সবাই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু ভালোবেসে দুঃখী বাঙালির চেতনায় স্বাধীনতার স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে ও ন্যায়যুদ্ধে পরিণত করে তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছেন। তিনি আমাদের জাতির পিতা। জীবনভর সংগ্রাম করেছেন এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আমরা স্মরণ করি এই মহান নায়ককে। একমাত্র স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা আজও আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌম ও উন্নয়নকে মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশে থেকে, খেয়ে-পরে তারা বাংলাদেশের ভালো দেখতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘর থেকে বের হয়ে দেখুক তাদের স্বপ্নের প্রিয় মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের পোড়ামুখ। সরকারি ভবনের শত শত গাড়ির পোড়া কঙ্কাল, দৃষ্টিনন্দন সরকারি ভবনের ওপর আগুনের লেলিহান শিখা দিয়ে বাংলাদেশের হৃদয় পুড়িয়ে দিয়েছে কারা। মেধাবীদের জন্য পৃথিবীর সব দেশে ভালো ভালো চাকরির সুযোগের হাতছানি রয়েছে। ঢাবির ছাত্ররা আজ সরকারি কর্মচারী হওয়ার আন্দোলনে দেশ পুড়িয়েছে। আজ যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারাই আগামী দিনের দেশের কর্ণধার হবে। উন্নত বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। যখন এসব শিক্ষার্থীর বয়স আরও পরিণত হবে পঞ্চইন্দ্রিয়ের আলোক জ্বালিয়ে বিবেকের ওপর আলোর প্রতিফলন ঘটবে তখন এসব শিক্ষার্থী দেখতে পাবে যে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এই দুঃখী দেশটির সঙ্গে তারা কী আচরণ করেছিল। সেদিন যদি অনুতাপ আসে তবেই সার্থকতা। তবে অনেক দিন তাদের অন্তরের পোড়া দাগ নিয়ে বেড়াতে হবে। যে মায়ের সন্তান চলে গেছে, যে স্ত্রী স্বামী হারিয়েছে তাদের অন্তরে পোড়া দাগ কোনো দিন মুছবে না। সবাই ভুলে যাবে শুধু স্বজনহারানো বেদনা তাদের বয়ে বেড়াতে হবে। পরিশেষে কবি কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদারের স্বদেশ প্রেম কবিতার চরণ দিয়ে শেষ করছি :
‘স্বদেশের উপকারে
নাই যার মন
কে বলে মানুষ তারে
পশু সেই জন’।
লেখক : কৃষি সচিব