একবিংশ শতাব্দীর এই যুগ শিল্পোৎপাদনের। যে দেশ এ ক্ষেত্রে সক্ষমতার পরিচয় দেবে, সে দেশ উন্নয়নের ঊর্ধ্বাকাশে পাখা মেলবেই। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই একটি দরিদ্রপীড়িত দেশ। ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ ছিল এ দেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। সেই শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় যখন আট মণ চাল পাওয়া যেত, তখনো এই দেশে দুর্ভিক্ষ থাবা বিস্তার করত। এমনকি অপেক্ষাকৃত সভ্য ব্রিটিশ শাসনামলে দুর্ভিক্ষে এ দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর থেকে মঙ্গা বা সাংবার্ষিক দুর্ভিক্ষ ইতিহাসের জাদুঘরে চলে গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে শিল্পায়নের কারণে। শিল্পায়নের সঙ্গে সম্পর্ক ইন্ধন শক্তির। বাংলাদেশে শুরু থেকেই ইন্ধন শক্তির অভাব ছিল প্রকট। প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে গ্যাসই ভরসা। বলা যায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত শিল্প খাতে যতটুকু এগিয়েছে, তার পেছনে সাশ্রয়ী দামে কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ ধন্বন্তরি ভূমিকা রেখেছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো একসময় প্রচার করত বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। দেশের মানুষকে মোহবিষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল এ দেশ থেকে বিদেশে গ্যাস রপ্তানি করা। আমাদের রাজনীতিকদের যত বদনাম থাক, তাঁরা সে ফাঁদে পা দেননি। দেশের ভবিষ্যৎ বিদেশিদের কাছে বিক্রি করার আত্মঘাতী পথে হাঁটেননি। দেশের মজুত গ্যাস ব্যবহার করেই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ থেকে আজ অনেকটাই সামনের কাতারে চলে এসেছে। তবে বর্তমানে দেশে মজুত গ্যাসের পরিমাণ এখন তলানিতে। দ্রুত মজুত ফুরাচ্ছে। দেশে যে গ্যাস আছে তা বড় জোর ১০ থেকে ১১ বছর চলবে। সাগর প্রান্তে গ্যাসের বড় কোনো উৎস আবিষ্কৃত না হলে দেশ এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি বিদেশনির্ভর হয়ে পড়বে। অস্তিত্বের স্বার্থেই সাগরে গ্যাস উত্তোলনে বাড়তি নজর দিতে হবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ সম্পূর্ণ রক্ষা করে, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের ভিত্তিতে বিদেশিদের দিতে হবে সাগরে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দায়িত্ব। গার্হস্থ্য কাজে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের অপচয় বন্ধের কথাও ভাবতে হবে।