রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান

মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক

নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান

পানি বিশুদ্ধকরণ নিয়ে আলোচনা :

 

পুরো জীবকূলের জন্য পানি অপরিহার্য। একটু ভেবে দেখো তো, যদি পানি না থাকত তাহলে আমরা কীভাবে বেঁচে থাকতাম। শুধু আমরা না, কোনো জীবই বেঁচে থাকতে পারত না। আমাদের দেহের ওজনের প্রায় অর্ধেকই পানি। এবার আসি পানির উৎস নিয়ে। প্রকৃতিতে নানা উৎস থেকে আমরা পানি পেয়ে থাকি। যেমন : বৃষ্টি, ঝরনা, পুকুর, নদী, টিউবয়েল ইত্যাদি। সব পানি কিন্তু বিশুদ্ধ নয়, বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ। বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি খেতে পারো। আবার ভূপৃষ্ঠে আমরা যেসব উৎস থেকে পানি পাই তাতে রোগ সৃষ্টিকারী নানা জীবাণু থাকতে পারে। ফলে ওই পানি সরাসরি খেলে তুমি নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারো। আর সে কারণেই প্রথমে পানি বিশুদ্ধ করতে হবে। তারপর বিশুদ্ধ পানি পান করবে। চলো এবার জেনে নিই, পানি বিশুদ্ধকরণের কয়েকটি প্রক্রিয়া—

স্ফুটন : এই প্রক্রিয়াটির সঙ্গে তোমরা সবাই পরিচিত। তোমাদের বাসায় পানি ফুটিয়ে পান করা হয়। অনেকে আবার পানি ফোটানোর পর ফিল্টার করে খাও। খুব ভালোভাবে পানি ফুটালে পানিতে উপস্থিত জীবাণুগুলো মরে যায়। ১৫-২০ মিনিট পানি ফোটাতে হয়। তারপর ঠান্ডা করে ছেঁকে পান করতে হয়। এটি পানি বিশুদ্ধকরণের সবচেয়ে সহজ প্রক্রিয়া।

পাতন : প্রথমে একটি পাত্রে পানি নিয়ে সেটাকে তাপ দিয়ে বাষ্পে পরিণত করা হয়। তারপর সেই বাষ্প ঘনীভূত করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি ওষুধ তৈরির জন্য এবং পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। কারণ এই প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ করা পানিতে অন্য কোনো পদার্থ থাকার সুযোগ নেই। তবে প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল।

ক্লোরিনেশন : পানিতে ব্লিচিং পাউডার যোগ করলে উৎপন্ন ক্লোরিন বিভিন্ন জীবাণুকে জারিত করে মেরে ফেলে। পানিতে জীবাণু থাকলে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে তা মেরে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক হিসেবে ক্লোরিন গ্যাস ও ব্লিচিং পাউডার অন্যতম। এ ছাড়া কিছু পদার্থ আছে, যেগুলো পানির জীবাণু মারার কাজে ব্যবহার করা হয়। বন্যার সময় বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব থাকে। আর বাড়ির চারপাশের পানিতে নানা ধরনের জীবাণু থাকে। ওই অবস্থায় পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ট্যাবলেট বা কিট দেওয়া হয়। এতে থাকে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড। এর মধ্যে থাকা ক্লোরিন পানিতে থাকা জীবাণুগুলো জারিত করে মেরে ফেলে। বোতলজাত পানির কারখানায়ও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

পরিস্রাবণ : পানিতে থাকা অদ্রবণীয় ধুলাবালির কণা এবং নানা রকম ময়লা-আবর্জনার কণা থাকতে পারে। এগুলোকে পরিস্রাবণ পদ্ধতিতে বের করা হয়। পানিকে বালুর স্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করলে অদ্রবণীয় কণাগুলো আটকে যায়। এ ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম ফাঁকযুক্ত কাপড়ও ব্যবহার করা যায়। আমাদের অনেকের বাসায় ফিল্টার রয়েছে। সেখানে ছোট ছোট নুড়িপাথর কিংবা বালুকণার মতো পাথরের একটা স্তর থাকে। ওটা পরিস্রাবণের কাজ করে।

পানি দূষিত হওয়ার কারণ কী?

নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে আমরা অত সচেতন নই। ফলে বৃষ্টি হলে সেই আবর্জনা পানিতে ধুয়ে পুকুর, নদী-নালায় চলে যায়। তোমরা যারা ঢাকায় থাকো, ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে লঞ্চে করে যাওয়ার সময় দেখেছ যে সদরঘাটের অংশে নদীর পানির রং কালো। নদীর আশপাশে থাকা কলকারখানার বর্জ্য নদীতে পড়ার কারণে প্রতিনিয়ত পানি দূষিত হচ্ছে। ফলন বাড়ানোর জন্য কৃষিজমিতে বিভিন্ন সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে সেসব রাসায়নিক চলে যায় নদীতে। এতেও দূষিত হয় পানি।

দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে বারবার পড়বে

পানির রাসায়নিক গঠন, পানির উৎস, পানির মানদন্ড, পরিবেশ সংরক্ষণে পানির ভূমিকা, পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি, বৈশ্বিক উষ্ণতা।

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১. পানি বিশুদ্ধকরণের ট্যাবলেট বা কিটে কী উপাদান থাকে?

উত্তর : পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ট্যাবলেট বা কিটে থাকে মূলত সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড।

২. ব্লিচিং পাউডারের সংকেত কী?

উত্তর : ব্লিচিং পাউডারের সংকেত Ca(OCl)Cl.

৩. নদ-নদীর পানির পিএইচ কত-এর মধ্যে থাকলে সেটি জলজ উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে না?

উত্তর : নদ-নদীর পানির পিএইচ ৬-৮ এর মধ্যে থাকলে সেটি জলজ উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে না।

৪. পৃথিবীতে ব্যবহারের উপযোগী পানি শতকরা কত ভাগ?

উত্তর : পৃথিবীতে ব্যবহারের উপযোগী পানি শতকরা ১ ভাগ।

৫. জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য ১ লিটার পানিতে কমপক্ষে কতটুকু অক্সিজেন থাকা দরকার?

উত্তর : জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য ১ লিটার পানিতে কমপক্ষে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা দরকার।

অনুধাবন প্রশ্ন

১. পানি বিশুদ্ধকরণের ক্লোরিনেশন প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা কর।

২. পানির মানদন্ড বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর।

৩. জলজ প্রাণীর জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

৪. বাংলাদেশে মিঠা পানির উৎস ব্যাখ্যা কর।

৫. পানির রাসায়নিক গঠন চিত্রসহ লেখ।

৬. পানির বিদ্যুৎ বা তড়িৎ পরিবাহিতা বলতে কী বোঝ?

৭. পানি বিশুদ্ধকরণের পাতন প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা কর।

৮. পরিবেশ সংরক্ষণে পানির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

৯. পানির উৎসগুলো উল্লেখ কর।

১০. পানির গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের ধর্ম ব্যাখ্যা কর।

প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টপিকস

১. পানি বিশুদ্ধকরণের প্রক্রিয়াগুলো আলোচনা কর।

২. বাংলাদেশে পানিদূষণের কারণগুলো চিহ্নিত করে আলোচনা কর।

৩. পানিদূষণ রোধে করণীয় কী? তোমার মতামত প্রদানপূর্বক বিশ্লেষণ কর।

৪. জীবকূলের ওপর পানিদূষণের প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

৫. বাংলাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব আলোচনা কর।

৬. বাংলাদেশে পানির উৎস হুমকির কারণ আলোচনা কর।

৭. পানি প্রবাহের সর্বজনীনতা আলোচনা কর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর