মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ : জয়া আহসান, অভিনেত্রী

সমালোচনা নিয়ে মাথা ঘামাই না

সমালোচনা নিয়ে মাথা ঘামাই না

বাংলাদেশ ও কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। এপার-ওপার বাংলা মিলিয়ে বর্তমানে চুটিয়ে কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অর্জন করেছেন ভারতের ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে দেবী, বিউটি সার্কাসের মতো চলচ্চিত্র। তার সমসাময়িক ব্যস্ততা ও বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন— পান্থ আফজাল

 

বাংলা নববর্ষ উদযাপন কেমন করলেন?

এবার কলকাতায় নববর্ষ উদযাপন করলাম। এর আগে এপার বাংলায় এই উৎসব উপভোগ করা হয়নি। এদিন এখানে নানা রকম পদের রান্না করেছি। বাংলাদেশকে মিস করেছি অনেক। কলকাতায় বাংলা নববর্ষ কীভাবে উদযাপিত হয় তা জানা ছিল না আমার। তবে বাংলাদেশে এটি কলকাতার দুর্গাপূজা উৎসবের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটের মঙ্গল শোভাযাত্রা এমন এক আয়োজন যা একবার হলেও সবার দেখা দরকার। আমি মনে করি, পৃথিবীর আর কোথাও এভাবে নববর্ষ পালন করা হয় না যেখানে প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।

 

‘বিউটি সার্কাসের কী খবর?

সার্কাসকে কেন্দ্র করে এক নারীর টিকে থাকার গল্প ‘বিউটি সার্কাস’। মাহমুদ দিদার পরিচালিত এই সিনেমার দৃশ্যধারণের কাজ শেষ। এই ‘বিউটি সার্কাসের আমিই সেই বিউটি। এটির পোস্ট  প্রোডাকশনের কাজ শেষে এ বছরেই হয়তো সেই গল্প দেখতে পাবেন সিনেমাপ্রেমীরা।

 

‘দেবী’ কবে মুক্তি পাবে?

এটি কিন্তু আমার প্রথম প্রযোজিত ছবি। এখন পোস্ট  প্রোডাকশনের কাজ চলছে। নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের রচনা অবলম্বনে অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে ‘দেবী’। ইতিমধ্যে এই ছবির ২টি পোস্টার ও একটি টিজার প্রকাশ পেয়েছে। অভিনন্দনের পাশাপাশি অনেকেই এই ছবিটি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। আমি এই সমালোচনা নিয়ে মাথা ঘামাই না।

 

নতুন আর কী করছেন?

তিনটি ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছি। এখন বিরসা দাশগুপ্ত পরিচালিত ক্রিসক্রস শুটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছি।

 

দুই বাংলায় ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী পার্থক্য রয়েছে?

কাজের ক্ষেত্রে ডিফারেন্স সেরকমভাবে কিছুই নেই। দুই বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতি এক রকম। তবে কাজের ক্ষেত্রে কিছু কাঠামোগত পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের পরিচালকরা খুব ভালো কাজ করছেন। আর কলকাতাতেও ভালো ভালো সব ছবি হচ্ছে।

 

ভালো ছবি না পরিচালক, কোনটাকে বেশি প্রাধান্য দেন?

আমি এমন ছবিতেই কাজ করব, যেটা আমার আগে পছন্দ হবে। যেখানে আমি নিজেকে অনেকভাবে মেলে ধরতে পারব। এমন ছবি যা দর্শকের রুচির সঙ্গে যাবে। আমার কাছে কমার্শিয়াল বা আর্ট ফিল্মের কোনো আলাদা জায়গা নেই। যে ছবির শিল্পের মান মানুষ মনে রাখবে এমন ছবিই করতে চাই।

 

সব চরিত্রেই আপনি এত সহজেই কীভাবে মানিয়ে যান?

কাছাকাছি চরিত্রে সবাই অভিনয় করতে পারে। আমাদের অভিনয় শিল্পীদের সবচেয়ে বড় পাওয়া যে, এক জীবনে বহুজীবন বাঁচা যায়। এটা একটা মাধ্যম যেখানে কখনো বারবনিতার জীবনে অভিনয় করছি, কখনো বা সার্কাস পার্টির এক খিলাড়ির চরিত্রে অভিনয় করছি, কখনো আমি একজন প্রতিবন্ধীর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করছি, কখনো আমি সংগ্রামী নারীর ভূমিকায় অভিনয় করছি, নানান রকম শেডসে অভিনয় করা যায় এখানে। সবচেয়ে বড় কথা আমার ওপর পরিচালকরা ভরসা করছেন।

 

ব্যক্তি জয়া এবং অভিনেত্রী জয়ার সম্পর্ক কেমন?

ব্যক্তি জয়া অনেক সহজ, সাধারণ। অভিনয় আমার কাজ, আপনার কাজ যেমন লেখালেখি করা। আমার কাজ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করা। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেলিব্রেটিশিপটাকে পছন্দ করি না। আমি মনে করি যে যতটা সাধারণভাবে বাঁচতে পারে, জীবন-যাপন করতে পারে সেই শিল্পী হয়। আমি আজকে যে এখানে ক্যামেরার সামনে রংচং মেখে স্পটলাইটে আছি, এটা হলো জয়া আহসানের ইমেজ!

 

জীবনের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য আছে কি?

আমি গন্তব্যে পৌঁছতে চাই না। গন্তব্যে পৌঁছে গেলেই শেষ। আমি জার্নিতেই থাকতে চাই।

 

নায়িকাদের বেলায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জনপ্রিয়তা কমে কিন্তু আপনার বেলায় হচ্ছে তার উল্টো। রহস্যটা কী?

আমি মনে করি, আঠারো বছর বয়সে একজন নারীকে যে সুন্দর লাগে, মানে যাকে তাকেই আঠারো বছর বয়সে সুন্দর লাগে, কিন্তু আপনার যত বয়স হবে, অভিজ্ঞতা আসবে, কপালে ভাঁজ পড়বে, সেই আঁকিবুঁকি, অভিজ্ঞতা নিয়েই কিন্তু সৌন্দর্যটা। আমার কাছে মনে হয়, এটা আরও বেশি সুন্দর। আমি কত দিন থাকতে পারি! এমন না যে আমি অনেকদিন জোর করে থাকব, দর্শক যদি অপছন্দ করে, আমি বিরক্ত হয়ে যাই, ডেফিনিটলি আমি তখন আর কাজ করব না।

 

অভিনয়ে এতদিনের জার্নি, পেছনে ফিরে তাকালে কী দেখতে পান?

আমার তো গোল্ডফিস মেমরি, আমি কিছু মনে রাখি না। আমি যখন যেটা করি সেটা নিয়ে খুব খুশি থাকি। তবে যখন সময় হয় একা বসার, তখন একটা সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট হয়, এর বেশি কিছু হয় না।

 

ব্যক্তি জয়া এবং অভিনেত্রী জয়ার সম্পর্ক কেমন?

ব্যক্তি জয়া অনেক সহজ, সাধারণ। অভিনয় আমার কাজ, আপনার কাজ যেমন লেখালেখি করা। আমার কাজ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করা। আমি ব্যক্তিগতভাবে সেলিব্রেটিশিপটাকে পছন্দ করি না। আমি মনে করি যে যতটা সাধারণভাবে বাঁচতে পারে, জীবন-যাপন করতে পারে সেই শিল্পী হয়। আমি আজকে যে এখানে ক্যামেরার সামনে রংচং মেখে স্পটলাইটে আছি, এটা হলো জয়া আহসানের ইমেজ! জীবনের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য আছে কি?

আমি গন্তব্যে পৌঁছতে চাই না। গন্তব্যে পৌঁছে গেলেই শেষ। আমি জার্নিতেই থাকতে চাই।

 

কলকাতার ফিল্মে আপনাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, বাংলাদেশের ফিল্মে কেন সেভাবে উপস্থাপন করা হয় না?

দেখুন, ইমপারফেকশনের আলাদা একটি বিউটি আছে। আমাদের দেশটা আলাদা, আমাদের জনপদ আলাদা, আমাদের ভূগোল আলাদা। ওদের হয়তো ইন্টেলেকচুয়াল আছে, আমাদের ভূগোল আছে। আমি বলছি না আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল নেই। আমাদের দেশে মানুষ বেশি, ক্রাইসিস বেশি, তবে আমাদের এখানে যেটা আছে সেটা হচ্ছে প্রফেশনাল আচরণের একটু অভাব আছে। তবুও একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন যে প্রেমটা কিন্তু বেশি আমাদের ছবিতে পাওয়া যায়। হ্যাঁ, অনেক সময় দিনের শেষে ছবিটা হয়তো ছবি হয়ে উঠে না। বা আমাদের এক্সপেকটেশন পূরণ করতে পারে না। আসলে এটাও ঠিক যে, আমাদের দেশে প্যাকেজিংটা ভালো না। ওদের দেশে প্রথমেই যেটা হয় যে ওরা পুরোটা আগে দেখতে পায়। মানে আগে পুরোটা দেখে তারপর ওই অনুযায়ী তারা সাজায়। আমরা স্বপ্নটা অনেক বড় দেখি কিন্তু আমাদের এক্সিকিউশনে একটু অসুবিধা আছে।

 

‘দেবী’ নিয়ে শিলার ক্ষোভ

 আমার জানতে ইচ্ছা করছে, কে ‘দেবী’ বানানোর অনুমতি দিয়েছে? আমরা চার ভাইবোন দেইনি। আমাদের চার ভাইবোনের অনুমতি ছাড়া কীভাবে এই সিনেমা সরকারি অনুদান পেল? কীভাবে এটা বানানো হয়ে গেল? কীভাবে এটা মুক্তি পাচ্ছে? খুব দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার সব কিছুর উত্তরাধিকার তার স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরা। সমাজের বিশিষ্ট মানুষের খুব খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই যে আমরা চার ভাইবোনই হুমায়ূন আহমেদের ছেলেমেয়ে! আমরা টিভিতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ-হুমায়ূন আহমেদ করছি না, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছি না, হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীতে ফুল দিচ্ছি না দেখে ভাবার কোনো কারণ নেই যে আমাদের আইনগত কোনো অধিকার নেই! আমাদের ১০০% আইনগত অধিকার আছে বাবার কোনো লেখা সিনেমা, নাটক, অনুবাদ হবে কিনা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার।

সর্বশেষ খবর