বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ঈদের ছবি অনলাইন প্ল্যাটফরমে!

আলাউদ্দীন মাজিদ

ঈদের ছবি অনলাইন প্ল্যাটফরমে!

শেষ পর্যন্ত ঈদের চলচ্চিত্র কি অনলাইন প্ল্যাটফরমেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে? চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখন এমনটিই আশঙ্কা করছেন। প্রদর্শকরাও তাই মনে করছেন। কারণ করোনার লকডাউনের কারণে সিনেমা হল, ছবি নির্মাণ সবই বন্ধ হয়ে আছে। আগামী ২৮ এপ্রিল সরকারি তথ্যমতে লকডাউন শেষ হতে পারে। তখন যদি লকডাউন শেষ হয় তারপরও  ঈদের যেসব ছবির নির্মাণ কাজ বাকি আছে সেগুলো কি এই রমজানের মধ্যে অল্প সময়ে শেষ করা যাবে? সেন্সর বোর্ডের কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। প্রদর্শকরা বলছেন, ফের লকডাউনে সব সিনেমা হল বন্ধ রয়েছে। গত বছর করোনার কারণে প্রায় সাত মাস সিনেমা হল বন্ধ থাকায় চরম লোকসানের কবলে পড়ে অনেক সিনেমা হল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। যে অল্প কয়টি সিনেমা হল লকডাউন শেষে খুলেছে, করোনার কারণে পর্যাপ্ত দর্শক ও মানসম্মত ছবির অভাবে সেগুলো চলেনি। এতে সিনেমা হল মালিকদের আর্থিক লোকসান আরও বেড়েছে। তাদের ব্যবসা বলতে গেলে নাভিশ্বাসে উঠেছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন বলছেন, ঈদে সিনেমা হল খুললেও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার যেভাবে এখন পর্যন্ত বাড়ছে তাতে দর্শক সিনেমা হলে আসবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। তা ছাড়া যেসব নির্মাতা ঈদের জন্য বিগ বাজেটের ছবি নির্মাণ করেছেন তারা হয়তো অল্প সিনেমা হল ও দর্শক আগমন অনিশ্চয়তার কারণে লোকসান গুনে ছবি মুক্তি দিতে চাইবেন না। এ অবস্থায় অনেক প্রযোজক ছবি মুক্তি দেওয়া থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিইও আলীমউল্লাহ খোকন জানান, ঈদে মুক্তির জন্য তাদের ছবি ‘জ্বীন’ নিশ্চিত ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ঈদে সিনেমা হল খুললেও দর্শক হলে আসবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ বাড়ায় এখন ঈদে সিনেমা হলে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, সময় যেহেতু হাতে আরও কিছু দিন আছে তাই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করব। এরপর সিদ্ধান্ত নেব ছবি সিনেমা হলে মুক্তি দেব নাকি অনলাইন প্ল্যাটফরমে যাব। এদিকে মিয়া আলাউদ্দীন বলছেন দীর্ঘদিন একটি ছবি নির্মাণ করে ফেলে রাখলে নানা কারণে ছবিটির মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। তৈরি ছবি বেশি দেরিতে মুক্তি দিলে সেটি পরিবর্তিত পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে দর্শক গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তাই হয়তো নির্মাতার মুক্তির বিকল্প চিন্তা করতে পারেন। কারণ এখন বিশ্বব্যাপী অনলাইনেও ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এদিকে ‘জ্বীন’ ছাড়া আরও যেসব ছবি ঈদে মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছিল তার মধ্যে রয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘অন্তরাত্মা’ ও ‘বিদ্রোহী’। আরিফিন শুভ অভিনীত ‘মিশন এক্সট্রিম’।

সিয়াম অভিনীত ‘শান’ এবং নিরব-বুবলীর ‘ক্যাসিনো’। বর্তমানে অনেকে প্রযোজক করোনা তান্ডবে সিনেমা হলে ছবি মুক্তি দিতে সাহস হারিয়ে বিকল্প হিসেবে অনলাইন প্ল্যাট ফরমের কথা ভাবছেন। এক্ষেত্রে বিগ বাজেটের ছবিগুলো যদি অনলাইনে মুক্তি দিয়ে কমপক্ষে নির্মাণ ব্যয় তুলে আনা যায় তাহলে ওটিটির দিকেই তারা ঝুঁকবেন বলে বলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক প্রযোজকের যুক্তি-‘নানা কারণে দর্শক এখন সিনেমা হল বিমুখ। তারা ঘরে বসেই ছবি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সিনেমা হলের পরিবর্তে ওটিটিতেই ছবি মুক্তি দেওয়া শ্রেয়। তাদের কথায় অনলাইন প্ল্যাটফরমের দর্শক বেড়েই চলেছে। শুধু দর্শক নয়, শিল্পীরাও এখন অনলাইনের ছবি বা সিরিজ করতে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। অনেকের কথায় অনলাইন প্ল্যাটফরম এখন সময়ের চাহিদা। তাই ছবি মুক্তি দিতে অনলাইনের পথেই হাঁটা শুরু করতে হবে। আর এই পথে হেঁটে চেষ্টা চালাতে হবে চলচ্চিত্রের হারানো বাজার ফিরিয়ে আনার। পাশাপাশি সিনেমা হলকে একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না। কারণ ছবি দেখার স্বাচ্ছন্দ্যের একমাত্র স্থান হলো সিনেমা হল। এর কোনো বিকল্প নেই। তাই সিনেমা কেন্দ্রিক ব্যবসা যেন দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টাও করতে হবে। প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘১৫ রোজা পর্যন্ত দেখি কী হয়। প্রযোজকরা সিনেমা দিলে নিয়মিত হল আর মৌসুমি হলসহ ২০০টির মতো হল চালু করতে পারব। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সিনেমা হলের পরিবেশ ফেরাতে কিছু উন্নয়ন কাজ জরুরি। সমস্যায় জর্জরিত দেশের সিনেমা হল মালিকরা সরকারের ঘোষণা করা তহবিল থেকে দীর্ঘমেয়াদি লোন নিতে আগ্রহী। আমরা আমাদের সমিতির সদস্যদের আবেদন সংগ্রহ করছি। ৮০ জনের মতো হল মালিক এ বিষয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু এখনো সরকার ঘোষিত সিনেমা হল উন্নয়ন তহবিলের টাকা আমাদের হাতে আসেনি। এ অবস্থায় লকডাউনের পর কখন সিনেমা হল সংস্কার করবও জানি না। কারণ ঈদের আগে সিনেমা হল খুললেও সময় থাকছে অল্প। সব মিলিয়ে ঈদে সিনেমা হলে ছবি মুক্তি প্রায় অনিশ্চিত।  তাই নির্মাতারা এখন ঈদের ছবি অনলাইনে মুক্তির দিকেই  ঝুঁকছেন।

সর্বশেষ খবর